কিশোরগঞ্জের নিকলীতে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখলের চেষ্টা ও চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা সদরের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন কান্দায় পৈত্রিক জমিতে চাষাবাদ করতে গিয়ে মৃত আব্দুল হামিদের সন্তানেরা এ বাঁধার মুখে পড়েন।
তারা সামাজিকভাবে দফায় দফায় এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলেও সালিশি বৈঠকের সিদ্ধান্ত মানছেন না প্রতিপক্ষ, বরং বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নিরুপায় হয়ে আব্দুল হামিদের সন্তানেরা প্রতিকার চেয়ে থানা পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ক্যাম্পের দ্বারস্থ হয়েছেন। সেখানে সমস্ত দলিল ও তাদের পক্ষে আদালতের রায়ের বিষয়টি অবহিত করেন। জমির প্রকৃত মালিকানার সত্যতা পেয়ে পৈতৃক জমি চাষাবাদে প্রতিপক্ষকে বাঁধা দিতে নিষেধ করেছে প্রশাসন। তবে তাতেও ক্ষান্ত হচ্ছে না প্রতিপক্ষ। জমি বাগিয়ে নিতে একের পর এক ষড়যন্ত্রও চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
জানা গেছে, জেলার নিকলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কৈবত হাটির মৃত আলীর ছেলে সাদির মিয়া। তিনি উপজেলা বিএনপি সাবেক গ্রাম বিষয়ক সম্পাদক। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে কয়েকজন সহযোগী নিয়ে আব্দুল হামিদের মেঝ ছেলে মঞ্জিল হোসেনকে পৈতৃক জমিতে চাষাবাদে বাঁধা এবং প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করেন এবং একই দিন আনুমানিক রাত দশটার দিকে তাকে ডেকে নিয়ে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
যুগ যুগ ধরে মালিকানাধীন পৈতৃক জমি চাষ করতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন জানিয়ে মঞ্জিল হোসেন বলেন, ‘আমার দাদা, বাবা এবং মায়ের কাছ থেকে ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত এক একর ছিয়ানব্বই শতাংশ জমি গত ৭০ বছর ধরে আমরা একতরফা মালিকানা, ভোগদখল এবং চাষাবাদ করে আসছি। প্রতিপক্ষ ১৯৬৮ সালে ভূমি জরিপ আমলে তাদের লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে আমাদের আরওআর, বিআরএস এবং দখলের বিরুদ্ধে একটি এওয়াজ দলিল তৈরি করে ৩০ ধারায় মামলা দায়ের করে। তবে যথার্থতা না পেয়ে শুনানি শেষে আদালত ১৯৮৮ সালে মামলাটি খারিজ করে দেন।’
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে তাদের জমির শতভাগ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নিকলী উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে একের পর এক সালিশের মাধ্যমে আমাদেরকে কোণঠাসা করে সাদির মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা। পরে আমরা পরিবার এবং সম্পত্তির নিরাপত্তার জন্য একটি মামলা দায়ের করি। আদালত আমাদের পক্ষে এবং তাদের বিপক্ষে একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে তারা সাময়িক সময়ের জন্য নিবৃত হয়।
‘তবে মামলাটি চলমান থাকলেও ক্ষান্ত হয়নি জবরদখলকারীরা। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে তারা নতুন করে চক্রান্তে লিপ্ত হয়। এবার বলপ্রয়োগের পথ বেচে নেওয়ার পাশাপাশি আমাদের কাছে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। লাঠিয়াল ভাড়া করে জমি থেকে উচ্ছেদের হুমকি এবং জমিতে চলমান চাষাবাদ ও সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেয় তারা’।
এই পরিস্থিতিতে নিজ এবং পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার বিধানে সেনা বাহিনীর হস্তক্ষেপ চান মঞ্জিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিকলী সেনা ক্যাম্পে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জমির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই এবং তার পৈতৃক ভূমি সরেজমিনে তদন্ত করে তাদের পক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে দাবি করেন আব্দুল হামিদের সন্তানেরা। বৈঠকে সাদির গং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ইনচার্জ প্রকৃত মালিককে জমি চাষে কোনো রকম বাধা সৃষ্টি না করার আদেশ প্রদান করেন। তবে তা উপেক্ষা করে বিএনপি নেতা সাদির মেম্বার ২৪ নভেম্বর থেকে জমি চাষাবাদে আবারও বাঁধা এবং মালিক পক্ষকে হত্যার হুমকি দিতে থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ নভেম্বর জমিতে চাষাবাদের কাজ করার সময় সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মঞ্জিলের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় বিএনপি নেতা সাদির মেম্বারের লোকজন। এই হামলায় যোগ দেয় সাবেদ আলী, আরফোজ, লোকমান, আবুল। প্রাণ বাঁচাতে তখন দৌড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন মঞ্জিল হোসেন।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা সাদির মেম্বারকে ফোন করলে জানান, জমি আমাদের কিন্তু ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তাই কিছু করতে পারিনি। তখন তাকে প্রশ্ন করা হয় ১৫ বছরের আগে কোথায় ছিলেন যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিলো? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি সাদির মেম্বার। তিনি বলেন, জমির দলিল রয়েছে আমার কাছে। তাকে জমির দলিল পাঠাতে বললে সে আর জমির দলিল পাঠায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিকলী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক বদরুল মোমেন মিঠু বলেন, গত কয়েকদিন আগে এ বিষয়টি নিয়ে থানায় একটি দরবার হয়েছিল। দরবারে মঞ্জিল কাগজপত্র সঠিক দেখাতে পেরেছে। কাগজপত্র অনুযায়ী মঞ্জিলের রাইট বেশি। দরবারে নির্দেশ সাদির মেম্বার ও তার লোকজন মানেনি। বর্তমানে আমাদের উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। দলে সাদির মেম্বারের কোন পদ পদবী নেই। তাই দলীয় কোন ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তারপরও আমি জেলা বিএনপির সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।
নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী আরিফ উদ্দীন বলেন, সেনাবাহিনীর ক্যাম্পেও তারা জমির বিষয়টি নিয়ে বসে ছিল। সেখানেও বিষয়টি সমাধান হয়নি। জায়গা জমির বিষয় তাই আমি উভয়পক্ষকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।
কেকে/এমআই