কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ভেতরে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশ নিষেধ থাকা সত্ত্বেও তা অমান্য করে তারা দিনের পর দিন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অবস্থান করছেন।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি বা ডিলার হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না, তবে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই তারা নিয়মিত হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে উপস্থিত থাকে, যার কারণে রোগীরা নানা ধরনের হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সমাধানের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তেমন কোনো পদক্ষেপ এখনও চোখে পড়েনি। সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, চিকিৎসকদের একটি দৃঢ় ভূমিকা এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর হতে পারে।
হাসপাতালের প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ও ভেতরে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভিড় লেগেই থাকে। তারা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করতে থাকে এবং রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসকরা যখন ব্যস্ত থাকেন, তখন তাদের কার্যক্রমে চিকিৎসাসেবায় ব্যাঘাত ঘটছে।
এক শিশু রোগীর মা, আয়েশা খাতুন বলেন, “আমি ডাক্তারের কক্ষে ঢুকেই দেখি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলছেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর চিকিৎসা নিয়েছি।”
এছাড়া, কুমারখালী উপজেলা থেকে আসা সাইফুল ইসলাম জানান, “যখন একটি রোগীর ব্যবস্থাপত্র নেওয়া হয়, তখন ৫-১০ জন প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের কোম্পানির ওষুধকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করেন। অনেক সময় রোগীর স্বজনদের সঙ্গে তাঁদের ঝগড়া হয়ে থাকে।”
কুষ্টিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান লাকী বলেন, “চিকিৎসকের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের কোম্পানির ওষুধ লিখতে চুক্তি করে থাকেন, যা চিকিৎসকের আন্তরিকতার অভাবের একটি দিক। চিকিৎসক যদি কঠোর হন, তবে কোনো নির্দেশনার প্রয়োজন হয় না।” তিনি আরও বলেন, “রোগীর ব্যবস্থাপত্র হলো তার গোপনীয় বিষয়, কিন্তু কোম্পানির প্রতিনিধিরা তা ছবি তুলে নিচ্ছেন, যা রোগীর গোপনীয়তা লঙ্ঘন করছে।”
এক বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, “প্রতিটি প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লেখার জন্য ডাক্তারদের কলম, প্যাড, চাবির রিং থেকে শুরু করে টিভি, ফ্রিজ, নগদ অর্থসহ নানা উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়, এবং এর বিনিময়ে তাদের ওষুধ লিখতে হয়। এই ব্যবস্থাপত্রের একটি কপি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠাতে হয়।” তিনি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়ায় তারা নিয়মিত ভিজিটে আসেন।
ফার্মাসিউটিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ এসোসিয়েশন (ফারিয়া) কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ (সম্রাট) বলেন, “যদি ভিজিট বন্ধ করা হয়, তবে চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগের ঘাটতি হবে এবং সম্পর্কের দুরত্ব বাড়বে। তাই আমরা অনুরোধ করছি, আমাদের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হোক, যাতে সাধারণ রোগীদের কোনো ভোগান্তি না হয়।”
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, “আমাদের কাছে একটি চিঠি এসেছে যেখানে বলা হয়েছে যে, হাসপাতালে কোনো ওষুধ কোম্পানির কর্মী ঢুকতে পারবেন না। আমরা এ বিষয়ে একটি মিটিং করবো এবং তাদের নিষেধ করে দেব যাতে তারা হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে।”
কেকে/এএম