লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনার হরবানীনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমির মালিকানা দাবি করে একটি ভবন নির্মাণে বাধা দিয়েছেন জেলা পরিষদ। এই ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা রাস্তায় নেমে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর ) দুপুরে লালমনিরহাট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন ভবন নির্মাণে বাধা দেয়। এ সময় স্থানীয় এলাকাবাসীসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে পড়েন। পরে খবর পেয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবিদা সুলতানা ঘটনাস্থলে যান। দীর্ঘ সময় আলাপচারিতার পর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্থানীয় লোকজন প্রধান শিক্ষক ও ঠিকাদারের সাথে কথা বলে স্থান ত্যাগ করেন। এর কিছুক্ষণ পরেই বাঁশ দিয়ে বাধা দেয়ার খুঁটি তুলে ফেলেন শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় লোকজন ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৩০ সালে কাকিনার হরবানীনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় । এরপরেই সেখানে পাকাঘর নির্মাণ করে পড়াশুনা শুরু করে ওই এলাকার শিক্ষার্থীরা। ২০২৩/২৪ অর্থ বছরে ১ কোটি ২ লক্ষ টাকার একটি ভবনের বরাদ্দে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এরই মধ্যে জেলা পরিষদ জমির উদ্ধারে কয়েকবার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মৌখিক এবং লিখিতভাবে অবগত করেন। এর পরেও নির্মাণ কাজ বন্ধ না করায় মঙ্গলবার সকালে লালমনিরহাট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেনসহ একটি টিম বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। পরে স্থানীয় জনতা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাজ বন্ধের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
লালমনিরহাট জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনার হরবানীনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে জমি নিয়ে জেলা পরিষদের ২০১৯ সাল থেকে ২৬৩/১৯ নং মামলা চলমান রয়েছে। এই জমিটি সিএস, এসএ তে জেলা পরিষদের ছিল এবং বিদ্যালয়টি একসময় জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ছিল। পরবর্তীতে প্রাথমিক বিদ্যালয় পৃথক হয়ে গেলে ৩২ শতক জমি বিদ্যালয়কে ছেড়ে দেয়া জেলা পরিষদ। অবশিষ্ট ১২ শতক জমির দাবী নিয়ে মামলা করে জেলা পরিষদ। মামলা নং ২৬৩/১৯ ফেব্রুয়ারিতে মামলাটির চূড়ান্ত রায় হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের বরাদ্দের টাকা ফেরত যাবার বিষয়টি শোনা যায় । পরে ভবনের কাজ শুরু করেন।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন জানান, ওই বিদ্যালয়ের মাঠের উত্তর পাশের রাস্তা লাগোয়া ১২ শতক জমি জেলা পরিষদের বিষয়টি জানিয়ে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, এটিও, প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়।
তিনি আরো বলেন, সর্বশেষ ইউএনও স্যার নিজে স্পটে গিয়ে ঘুরে দেখেছেন। তদুপরি তারা কাজ চালিয়ে যাওয়ায় আজকে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে দাবীকৃত জমির সীমানা মেপে বাশ দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। এবং ঠিকাদারকে বিস্তারিত অবহিত করে মামলার রায় না আসা পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে অনুরোধ করা হয়। কারণ রায় যে পক্ষেই যাক রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয় হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে যেহেতু এখনো মামলা চলমান রয়েছে, সেহেতু সেখানে কাজ করা ঠিক হবে না।তবে বিদ্যালয়ের বিষয়টি আমরা মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট ইউএনও, জেলা পরিষদ বিদ্যালয়ের বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
কেকে/এইচএস