গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন ছিল বাবুই পাখির বাসা। তালের পাতায় নিপুণ কারুকাজে এই পাখি গড়ে তুলতো তার সুন্দর বাসা, যা গ্রাম বাংলার প্রকৃতির এক অপূর্ব অংশ ছিল। কিন্তু আজকের পরিবর্তিত পরিবেশে বাবুই পাখি বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। এক সময় বাংলার মাঠ-ঘাট, গ্রাম-বাংলায় তালগাছের পাতায় ঝুলন্ত বাবুই পাখির বাসা ছিল নিত্যসঙ্গী। আজ তা হারাতে বসেছে।
কবির ভাষায়, ‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, ‘কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই’ হ্যাঁ আবহমান গ্রাম বাংলার বাসা তৈরির যে নিঁখুত কারিগর, কবির কালজয়ী ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতার নায়ক সেই বাবুই পাখি শিল্পের বড়াই করতেই পারে। তবে তাল গাছের স্বল্পতা আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বাবুই পাখি আজ নিজেই অস্তিত্ব সংকটে আছে বলে মনে করেন অনেকেই। কালের বিবর্তনে বিলীন হতে বসেছে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার গ্রামগঞ্জে খড় দিয়ে বানানো তালগাছ হতে বাবুই পাখির বাসা। যেখানে সর্বদা একসময় বাবুই পাখির কলতানে মুখরিত থাকতো বিভিন্ন গ্রাম। তালগাছ নিধনের ফলে বাসা হারিয়ে বিলীনের পথে বাবুই পাখি।
জানা যায়, একটা সময় গ্রাম-বাংলার মাঠের ধারে, পুকুর পাড়ে কিংবা মাঠের পাশে দেখা মিলতো সারি সারি তাল গাছের। সেখানে বুনন শিল্পী বাবুই পাখির বাসাও কারও নজর এড়াতো না। সেই তাল গাছ আর বাবুই পাখির বাসা দুটোই আজ হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলা থেকে। এক সময় গ্রামগঞ্জে, এমনকি শহরতলীতেও অনেক তালগাছ দেখা যেতো। সেসব তালগাছে ঝুলে থাকতো হাওয়ায় দোদুল্যমান বাবুই পাখির বাসা। একসঙ্গে ১০-২০টি বাসা ঝুলে থাকতে দেখা যেতো তালগাছগুলোতে। তবে এগুলো এখন অতীত চিত্র। বর্তমানে না দেখা যায় তালগাছ, না দেখা যায় তালগাছে ঝুলন্ত বাবুইয়ের বাসা। শুধু তালগাছ নয়, নারকেল, সুপারিসহ নানান দীর্ঘ বৃক্ষেই বাসা বাঁধে বাবুই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব গাছ কমে যাওয়ায় আবাসন নিয়ে চরম সংকটে পড়েছে এই পাখি।
আবাসন সংকটের মাঝে এসব জায়গায় বাবুই বাচ্চা জন্ম দেওয়ায় তা অনায়াসেই নিয়ে যাচ্ছে মানুষ। যার ফলে চরম অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে পড়েছে এই সময়ের বাবুই পাখি। ঝুঁকি জেনেও অনেকটা বাধ্য হয়েই যেন অনিরাপদ জায়গায় আবাস গড়ে তুলছে পাখিগুলো। ফলে নিমিষেই ঝড়ের কবলে কিংবা মানুষের হাতে মারা পড়ছে এরা। বৈরী আবহাওয়ার ফলে আজ তালগাছে বাবুই পাখির কলতান কমই শোনা যায়। তবে ভবিষ্যতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছপালা এবং পাখপাখালির কোনো বিকল্প নেই।
বাবুই পাখি, প্রকৃতির এক নিখুঁত কারিগর, তার বাসা হারিয়ে বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই পরিবেশ রক্ষার কাজে এগিয়ে আসি।
কেকে/এএম