শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,
১০ ফাল্গুন ১৪৩১
বাংলা English

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: বৈষম্যবিরোধীদের নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ      এখনই স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্ভব: সংস্কার কমিশন       দেশ পুনর্গঠনে দ্রুততম সময়ে স্বচ্ছ নির্বাচন জরুরি: তারেক রহমান      তারা ক্ষমতায় থাকলে রাজা, ক্ষমতা হারালে ইঁদুর: জামায়াত আমির       স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশমালা হস্তান্তর      জুলাই বিপ্লবের কৃতিত্ব জানালেন মির্জা ফখরুল      তাড়াশে গাছে গাছে আমের মুকুল ম-ম ঘ্রাণে মুখরিত       
গ্রামবাংলা
লক্ষ্মীপুরে হানাদার মুক্ত দিবস পালিত
ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ,লক্ষ্মীপুর
প্রকাশ: বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩:১৪ পিএম  (ভিজিটর : ১৫১)
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

৪ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিন ভোরে লক্ষ্মীপুর শহরের বাগবাড়িস্থ মিলেশিয়াদের প্রধান ঘাঁটি আক্রমণ করেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল গুলিবর্ষণের মুখে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় ওই ঘাঁটির দুই শতাধিক রাজাকার ও হানাদার। এটাই ছিল লক্ষ্মীপুরে হানাদারবিরোধী মুক্তিযোদ্ধাদের শেষ প্রতিরোধ।

নয় মাসে লক্ষ্মীপুরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা ৩৭ টি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। এতে শহীদ হন ৩৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বীর শহীদরা হলেন- মনসুর আহমেদ, রবীন্দ্র কুমার সাহা, আলী আজম, লোকমান মিয়া, জয়নাল আবেদিন, মোহাম্মদ হোসেন, আবদুল বাকির, জহিরুল ইসলাম, আহাম্মদ উল্লাহ, আবদুল মতিন, মাজহারুল মনির সবুজ, চাঁদ মিয়া, নায়েক আবুল হাশেম, মো. মোস্তফা মিয়া, নুর মোহাম্মদ, রুহুল আমিন, আবুল খায়ের, আবদুল হাই, মমিন উল্যা, আবু ছায়েদ, আব্দুল হালিম বাসু, এস এম কামাল, মিরাজ উল্ল্যা, মো. আতিক উলাহ, মো. মোস্তফা, ইসমাইল মিয়া, আবদুল্লাহ, আবুল খায়ের ভুতা, সাহাদুলা মেম্বার, আবুল কালাম, মোস্তাফিজুর রহমান, বেনু মজুমদার, আলী মোহাম্মদ, শহীদ নজরুল ইসলাম ও আবদুল রশিদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পুরো সময় জুড়ে লক্ষ্মীপুর জেলায় বর্বর পাকিস্তানি হানাদার ও এ দেশীয় রাজাকার বাহিনীর হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষত বিক্ষত ছিল।

অপরদিকে, মুক্তিযোদ্ধাদের অপ্রতিরোধ্য গেরিলা যুদ্ধ তাদের জন্য আতঙ্কের কারণ ছিল। ৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে লক্ষ্মীপুর হানাদার ও রাজাকার মুক্ত হয়।

লক্ষ্মীপুর শহরের মাদাম ব্রিজ, রায়পুর আলিয়া মাদরাসা, রায়পুর এল এম পাইলট, বাগবাড়ি গণকবর, দালাল বাজার গার্লস হাইস্কুল, মডেল হাইস্কুল, মদিন উল্যা চৌধুরী (বটু চৌধুরী) বাড়ি, পিয়ারাপুর বাজার, মান্দারী মসজিদ ও প্রতাপগঞ্জ হাইস্কুল, রায়পুর আলীয়া মাদ্রাসা, এল এম হাইস্কুল ও ডাকাতিয়া নদীর ঘাট, রামগতির চর কলাকোপা মাদ্রাসা, ওয়াপদা বিল্ডিং, আলেকজান্ডার সিড গোডাউন, কমলনগরের হাজিরহাট মসজিদ, করইতলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন গোডাউন, রামগঞ্জ গোডাউন এলাকা, রামগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল, জিন্নাহ হল (জিয়া মার্কেট) ও ডাক বাংলো ছিল হানাদার ও রাজাকার ক্যাপ এবং গণহত্যার স্থান।

এদিকে, স্বাধীনতা যুদ্ধের নয় মাসে লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ সড়কে প্রতাপগঞ্জ হাইস্কুল, মান্দারী মসজিদ, মাদাম ঘাট ও বাগবাড়ি, লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ সড়কে দালাল বাজার, কাজীর দিঘীর পাড়, কাফিলাতলী, পানপাড়া, মিরগঞ্জ, পদ্মা বাজার, মঠের পুল এবং রামগঞ্জের হাইস্কুল সড়ক ও আঙ্গারপাড়া, লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কে চর কলাকোপার দক্ষিণে জমিদার হাট সংলগ্ন উত্তরে, করুণানগর, হাজির হাট আলেকজান্ডার এবং রামগতি থানা ও ওয়াপদা বিল্ডিং এলাকা, রায়পুর আলীয়া মাদ্রাসা ও এল এল হাইস্কুল এলাকায় অধিকাংশ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এ সময় হাজার হাজার নিরীহ মানুষ এবং ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শীহদ হন। এছাড়া মুক্তিবাহিনীর হাতে শত শত হানাদার ও রাজাকার নিহত হয়। জেলায় মোট শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১১৪।

লক্ষ্মীপুরের প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমান্ডার রফিকুল ইসলাম মাস্টারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ১ ডিসেম্বর মিলেশিয়াদের বাগবাড়ী ক্যাম্প অনেক দূর থেকে ঘেরাও শুরু করে। প্রবল গুলিবর্ষণ করতে করতে ওই ঘাঁটির রাজাকার ও হানাদারদের অবরুদ্ধ করে ৩ ডিসেম্বর খুব কাছে থেকে ঘাঁটি ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে অসহায় হয়ে যায় তারা। ৪ ডিসেম্বর ভোরে হানাদাররা আত্মসমর্পণ শেষে লক্ষ্মীপুর ছেড়ে চলে যায়।

বিভিন্ন ইতিহাস এবং মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া তথ্যমতে, যুদ্ধের নয় মাস লক্ষ্মীপুর শহরের বাগবাড়িস্থ বিশাল সারের গুদামটি ছিল মিলেশিয়াদের প্রধান ঘাঁটি। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী স্থানীয় বাঙালিদের ধরে এনে এখানে অমানুষিক নির্যাতন করা হতো। শেষে রহমতখালী খালের ওপর মাদাম ব্রিজে ফায়ার করে হত্যা করে খালে ভাসিয়ে দেওয়া হতো লাশ। বাগবাড়ির এই জায়গাটিকে বলা হয় টর্চার সেল। যুদ্ধ শেষে এই টর্চার সেলে লাগোয়া গণকবর স্থাপিত হলেও সংরক্ষণ করা হয়নি মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বিজড়িত মাদাম ব্রিজ এলাকা। ভগ্নদশা নিয়ে পরিত্যক্ত মাদাম ব্রিজটি মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের ক্ষত চিহ্ন ও স্মৃতি নিয়ে আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ স্থানটি সংরক্ষণ করা হয়নি।

আরও জানা যায়, নভেম্বরের শেষের দিকে রায়পুর আলীয়া মাদ্রাসায় হানাদারদের ক্যাম্প আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা। কমান্ডার হাবিলদার আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা এখানে হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম বাসু শহীদ হন। শহীদ আব্দুল হালিম বাসু’র নিজ এলাকা সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের প্রধান সড়কটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়। বিজয়র নগর এলাকায় তার নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘বাসু বাজার’।

১৯৭১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এ কে এম আলী হায়দারের নেতৃত্বে তৎকালীন বৃহত্তর নোয়াখালীর বাঁধের হাট এলাকার রাজগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন মাজহারুল মনির সবুজ। তার নামানুসারে নিজ এলাকা ভবানীগঞ্জের পিয়ারাপুরে ‘শহীদ মাযহারুল মনির সুবজ উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রতি বছর ০৪ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর মুক্ত দিবসে প্রশাসন এবং বিভিন্ন সংগঠন এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে বলে কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দরা জানান।

কেকে/এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  লক্ষ্মীপুরে হানাদার মুক্ত দিবস   মুক্তিযোদ্ধা   মুক্তিযুদ্ধ  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডের পরও বিশ্বরেকর্ড গড়ে অস্ট্রেলিয়ার জয়
রায়পুরে পুকুর থেকে বৃদ্ধের ডুবন্ত মরদেহ উদ্ধার
বাকৃ‌বি‌তে জন্ম নি‌রোধকসহ ৫ ছিনতাইকারী আটক
জমি সংক্রান্ত বিরোধে চিত্র নায়িকা দিতির বাড়িতে হামলা, আহত-২
বৈষম্যবিরোধীদের নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ

সর্বাধিক পঠিত

৩৬ বছর পর হারানো মা-কে ফিরে পেলেন ছেলে
মৌলভীবাজারে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৬৬ লাখ টাকা লুট
কাপাসিয়ায় মনোজ্ঞ ইসলামি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত
বৈষম্যবিরোধীদের নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন

গ্রামবাংলা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝