পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রথম অবস্থানে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা। এই উপজেলা থেকে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়ে থাকে। সেই লক্ষ্যে প্রতিবছর সরকারিভাবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে পেয়াঁজ বীজ বিতরণ করা হয়ে থাকে। তবে এবারের প্রণোদনার পেয়াজ বীজেই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন কৃষকেরা। বিষয়টির সত্যতাও পেয়েছেন বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের রবি মৌসুমের আওতায় ১ হাজার ৪৫০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে তাহেরপুরী ও বারি পেয়াঁজ-৪ জাতের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। প্রণোদনা হিসেবে এক কেজি করে পেয়াঁজ বীজ বিতরণ করা হয়। এতে প্রণোদনা পাওয়া সকল কৃষকই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
কৃষকরা বলছেন, এসব বীজের ৫ থেকে ৭% বীজও অঙ্কুরিত হয়নি। এমনকি কোনো কোনো কৃষকের জমিতে অঙ্কুরিত বীজের হার ০%। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, ১০-১২% বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে বলে সরেজমিনে প্রমাণ পেয়েছেন। যার হার মোটেও সন্তোষজনক নয় বলে জানান তিনি। এসব বীজ বপনের সময় শেষ হওয়াতে বর্তমানে হতাশায় দিন কাটছে কৃষকদের।
এ বছর সালথা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা বীজ পাওয়া কৃষক আরজু মিয়া, রমজান হাওলাদার, কবির কাজী ও শরিফুল হাসান জানান, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের মাঝে প্রণোদনার এক কেজি বীজ ও সার দেয় কৃষি অফিস। কিন্তু প্রণোদনায় পাওয়া বীজের অঙ্কুরিতের হার দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। ওই উপজেলার কারও বীজ অঙ্কুরিত হয়নি বলে অনেক কৃষক অভিযোগ করেন। যে বীজ পেয়েছেন তারা, তার কিছুই অঙ্কুরিত হয়নি। কয়েকদিন পরেই হালি পেয়াঁজ লাগানো শুরু হবে। এখন নতুন করে বীজও পাওয়া যাচ্ছে না বা বুনানোর (বপন) সময়ও শেষ। আমরা এখন কি করবো জানিনা। এই পেয়াঁজ দিয়ে আমাদের সংসার চলে। এ বছর পেয়াঁজ বীজের দাম বেশি হওয়ায় কেনার (ক্রয়ের) ক্ষমতার বাইরে থাকায় অনেক আশা করে উপজেলা থেকে এক কেজি বীজ নেন। কিন্তু তা কিছুই অঙ্কুরিত হয়নি। এর ক্ষতিপূরণ দাবী করেন তারা।
এদিকে কৃষকদের এমন ক্ষতির দায়ভার নিতে চাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট উপজেলা কমকর্তা। তাঁরা বিএডিসি কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন সিকদার বলেন, এক হাজার চারশত পঞ্চাশ জন কৃষক পেঁয়াজবীজ পেয়েছেন। তাদের বীজগুলো না গজানোর অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, শূন্য থেকে ১০ শতাংশ বীজের চারা গজিয়েছে। তিনি বলেন, বিএডিসির সরবরাহ করা পেঁয়াজবীজ কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা কৃষি পুনর্বাসন ও প্রণোদনা কমিটি একটি তদন্ত দল গঠন করেছে।
সুদর্শন সিকদার আরও বলেন, এ বছর সালথায় উপজেলায় সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
কেকে/এমআই