কেরানীগঞ্জ যেন এক আতঙ্কের জনপদ! ঘুম-খুন আর অপরাধের উর্বর ভূমি কেরানীগঞ্জে আব্বা বাহিনীর উত্থানের পর দীর্ঘদিন শান্ত থাকলেও ফের কামরাঙ্গীরচর থানা আশ্রাফাবাফ ইউনিট বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রনি খান(৪০) খুনের ঘটনা আলোচনায় ।
পরিবারের অভিযোগ মাদক সম্রাট পিচ্ছি মনিরের ভাই গুলজার ও নাদিম রনিকে হামলার ঘটনায় মামলায় সহায়তা করার জন্য কেরানীগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কামরাঙ্গীচর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে শুনতে পারি রনির লাশ পড়ে আছে হাসপাতালে। তবে কে বা কারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তা জানা নেই পরিবারের।
স্থানীয়রা বলছেন, গত শনিবার দুপুরে কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর সামনে মাদক সম্রাট পিচ্ছি মনির ও স্থানীয় নুর হোসেন গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনায় নুর হোসেন গ্রুপের বেশ কয়েকজন আহত হয়। আহতরা বেলা সাড়ে তিনটার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে পিচ্ছি মনিরের ভাই গুলজারের লোকজন হাসপাতাল ও ব্যস্ত সড়কে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে নুর হোসেন ও স্থানীয় লোকজন তাদের ধাওয়া হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে রাত ৮ টার দিকে একটি লাশ জিয়ানগর এলাকায় পড়ে থাকতে দেখে এক অটোরিকশা চালক লাশটি হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে জানা যায় লাশটি কামরাঙ্গীরচর থেকে ডেকে আনা সে বিএনপি'র নেতার লাশ। তবে কে বা কারা কখন তাকে হত্যা করে ফেলে রেখে গেছে সে ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
জিয়ানগর-খোলামোড়া এলাকাটি কেরানীগঞ্জের মাদকের রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পেলেও ৫ হত্যা মামলাসহ প্রায় ৩০ মামলার আসামি পিচ্ছি মনিরের মত ভয়ংকর লোকের বসবাস এখানে তা জানা ছিলো না এলাকাবাসীর। এলাকাটি বুড়িগঙ্গা নদী ঘেঁষা আর সীমান্তবর্তী হওয়ায় মাদক কেনা-বেচা, খুন আর ভাসমান অপরাধীদের নিরাপদ আবাসস্থলে পরিনত হয়েছে। রাজধানীর অনেক ভাড়াটে খুনি, মাদক সম্রাটের বসবাস আসা-যাওয়া এলাকাটিতে। বহিরাগত অধ্যুষিত হওয়ায় এলাকাটিতে নিয়ন্ত্রণ নেই স্থানীযদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত ৩০ নভেম্বর এক রাতের ব্যবধানে জিয়ানগর এলাকায় রনি(৪০) ও সোহেল নামে দুই ব্যক্তির ওপর হামলায় ঘটনায় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। খুন দুই গ্রুপের সংঘর্ষের কারণে হয়েছে বলে প্রচার করা হলেও বাস্তবে এর প্রমাণ মেলেনি। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ বেলা ৩টা থেকে শুরু হয়ে থেমে থেমে ৬টা পর্যন্ত চললেও লাশটি এক অটোরিকশা চালক হাসপাতালে নিয়ে আসে ৮টার দিকে। তাছাড়া মূল সড়কে লাশটি পড়ে থাকলেও তাকে আঘাত করতে দেখেনি কেউ। কোন পক্ষের লোকের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে রনির তা বলতে পারেনি পরিবারের লোকজনও। পাশেই নিহত রনির ভাইয়ের বাড়ি থাকা সত্যেও তারা অবগত ছিলেন না সংঘর্ষের বিষয়ে। লাশটি ঘটনাস্থলে কীভাবে কখন এসেছে, কাদের সামনে কে তাকে ছুরিকাঘাত করে খুন করেছে এর কোন উত্তর মেলেনি গত ৪ দিনেও। এলাকাবাসী ধারনা করছে সংঘর্ষের ঘটনায় সুবিধা পেতেই এ হত্যাকাণ্ড।
এছাড়া সর্বশেষ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রনির বন্ধুদের সাথে নাদিম ও গুলজারের কথা হলে তারা জানায় রনি তাদের সাথেই আছে, তবে পরবর্তীতে তাদের মোবাইল বন্ধ পওয়া যায়।
নিহত রনির বোনের দাবি নাদিমকে ধরা গেলেই মিলবে রনি হত্যার রহস্য। রনিকে কারা মেরেছে, কেনো মেরেছে সেব্যাপারে কিছুই জানেন না তারা। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ১২ বছরের ছেলেকে নিয়েপড়েছেন মহা বিপদে, তবে গুলজার বাহিনীর পক্ষ হতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিনিময়ে দু'টি অটোরিকশা কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হচ্ছে বলেও কথায় উঠে এসেছে।
এ ব্যাপারে গুলজার, নাদিম ও নুর হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শাহানুর ইসলাম বলেন, সংঘর্ষে আহত বেশ কয়েকজন লোক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলে কে বা কারা তাদের উদ্দেশ্য করে হাসপাতালে ককটেল নিক্ষেপ করে। একটি ককটেল সিজারিয়ান রোগী রাখার কক্ষের দেয়ালে বিস্ফোরণ হলে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরে রাত ৮টার দিকে একটি ক্ষত বিক্ষত দেহ হাসপাতালে নিয়ে এলে পরীক্ষা করে দেখা যায় বেশ আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে তার মৃত্যু সংঘর্ষে হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।
এই বিষয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহরাব আল হোসাইন জানান, নিহতের স্বজনরা এখনো মামলা করতে আসেনি। হাসপাতালে ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটানোয় বিষ্ফোরণ আইনে মামলা করা হয়েছে। সে মামলায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে।
কেকে/এজে