বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমননা এবং আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ‘ভারতীয় পণ্য বর্জনে’র আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক অনুষ্ঠানে তিনি স্ত্রী আরজুমান আরা বেগমের দেওয়া ভারতীয় শাড়ি ছুড়ে ফেলেন এবং নেতাকর্মীরা তাতে আগুন ধরিয়ে দেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যারা আমার দেশের পতাকাকে ছিঁড়ে দেয়, আমরা তাদের দেশের পণ্য বর্জন করব। তাদের দেশের যে শাড়ি কিনত আমাদের মা-বোনেরা-স্ত্রীরা তারা আর ভারতীয় শাড়ি কিনবে না। তারা ভারতের সাবান কিনবে না, তারা ভারতের টুথপেস্ট কিনবে না, তারা ভারতের কোনো কিছু কিনবে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমার দেশ আমরা স্বনির্ভর। আমার এখানে পেঁয়াজ হয়, ভারতের পেঁয়াজের চাইতে আমাদের পেঁয়াজের ঝাঁজ অনেক বেশি, ভারতের মরিচের চাইতে আমাদের মরিচের ঝাল অনেক বেশি… আমাদের যদি জায়গা না থাকে আমরা ছাদের ওপরে মরিচ লাগাব, আমরা বাড়ির উঠানের মধ্যে পেঁপে গাছ লাগাব। তাই আমরা এদের (ভারত) মুখাপেক্ষী হব না, আমরা ভারতীয় পণ্য বর্জন করব।’
ভারতীয় শাড়ি ছুড়ে ফেলে দিয়ে রিজভী বলেন, ‘একটি পুরোনো শাড়ি আমার বাসায় আমার স্ত্রীর ছিল, আমার স্ত্রী আমাকে দিয়েছে একটি ইন্ডিয়ান শাড়ি, আমি বলেছি আজকে এটা দিয়ে দাও, সে এটা দিয়ে দিয়েছে। এই সেই ইন্ডিয়ান শাড়ি আমার স্ত্রী সে নিজেই এই শাড়ি দিয়েছে, এটা আজকে আপনাদের সামনে আমি ছুড়ে ফেললাম (ছুঁড়ে ফেলে দিলে কর্মীরা ভারতবিরোধী স্লোগান দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়) আর কোনো ভারতীয় শাড়ি নয়। আমরা টাঙ্গাইলের শাড়ি পরব, আমরা রাজশাহীর সিল্ক পরব, আমরা কুমিল্লার খদ্দর পরব।’
এ সময়ে কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকে ‘বয়কট বয়কট, ভারতীয় পণ্য’। আজ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘দেশীয় পণ্য কিনে হও ধন্য’ ব্যানারে ভারতীয় পণ্য বর্জন ও দেশি পণ্য ব্যবহার উৎসাহিত করতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রিজভী বলেন, ‘আপনারা একটু দেবেন, আমরা আপনাদের ওপর মুখাপেক্ষী থাকব, এটা ভাবার কারণ নেই। আপনারা একটু দেবেন আর বলবেন তা শুনতে হবে, এটা দুই-একজন হাসিনার মতো লোক বলতে পারে, কিন্তু কোটি কোটি বাংলাদেশের মানুষ এটা করবে না।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘তবে আমার দেশের জনগণকে বলব, ওরা যে বাংলাদেশের লুণ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে, ওরা যে বাংলাদেশের পতাকা পুড়িয়েছে, আমাদের মর্যাদাহানি করার চেষ্টা করেছে, আমরা ভারতের পতাকাকে লাঞ্ছিত করব না, আমরা আরেকটা স্বাধীন দেশের মর্যাদাকে ছোট করব না। আমরা প্রত্যেক জাতির যে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সেটিকে আমরা অসন্মান করব না, আমরা ওদের মতো ছোটলোকি করব না। আমরা ওদের দেশের পতাকাকে সন্মান করব, কিন্তু ওদের পণ্য বর্জন করব।’
ভারতীয়দের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছো। তোমরা আমাদেরকে পছন্দ করো না। তারপরও তোমাদের জিনিস আমাদের কিনতে হবে? বাংলাদেশের মানুষ তো মাথানত করার মানুষ না। আমরা একবেলা খেয়ে থাকব, তারপরও আমরা মাথানত করবো না।’
রিজভী বলেন, ‘ভারতের অনেক সাংবাদিক, অনেক রাজনৈতিক নেতা বলেন, আমাদের (ভারতে) এখানে না এলে আপনাদের (বাংলাদেশের মানুষের) চিকিৎসা হয় না। আমি প্রশ্ন করি, আরে আপনারা কি বিনা পয়সায় চিকিৎসা দেন, আপনারা কি বিনা টাকায় এক কাপ চা খাওয়ান, এই নজির তো নেই আপনাদের। বাংলাদেশের লোক ডলার খরচ করে ওখানে গিয়ে। এখন কলকাতার নিউ মার্কেট বন্ধ, দোকান পাট বন্ধ সেখানে আর কোনো খরিদদার নাই, আমাদের ডলারে বাজার সদাই কেনা হতো।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘তারা (ভারত) নিষ্ঠুর হাসিনাকে পছন্দ করে, বাংলাদেশের মানুষকে পছন্দ করে না। বাংলাদেশ টিকে থাকুক, এটা তারা চায় না। আজকে তারা নানা ধরনের উসকানি দিচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে, বাংলাদেশের ভেতরে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তাদের উসকানিতে পা দেয়নি। দুই-একটা গোষ্ঠি থাকতে পারে, তারা চিহ্নিত হয়ে গেছে, তারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে উন্মোচিত হয়ে গেছে, পার্শ্ববর্তী দেশ যে আমাদের এখানে উসকানি দিতে পারে, এটা গোটা জাতি ধরে ফেলেছে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর যে ঐক্য, এটা ইস্পাতকঠিন ঐক্য, এই ঐক্যকে কেউ ভাঙতে পারবে না।’
আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘সেখানে একটি উগ্রবাদী মানুষ জোরপূর্বক বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন তার ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে আমাদের কর্মচারীকে আঘাত করেছে, আমাদের জাতীয় পতাকা যেটা পতপত করে উড়ছিল, সেটার স্ট্যান্ড ভেঙে আমাদের পতাকাকে তারা ছিঁড়েছে। কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনে গিয়ে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আজে-বাজে বলেছে, বোম্বের ডেপুটি হাইকমিশনে গিয়ে তারা বলেছে, আমরা তাদের নানাবিধ বাংলাদেশ-বিরোধী প্রচার আমরা দেখছি। বাংলাদেশ সরকার আগরতলায় ভিসা বন্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা সঠিক সিদ্ধান্ত।’
ভারতীয় পণ্য বর্জনের এই অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্য সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জাহিদুল কবির, জাহা্ঙ্গীর আলম ও তৌহিদুর রহমান আউয়াল বক্তব্য দেন।
কেকে/এমআই