বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, প্রশাসনের সর্বস্তরে সংস্কারের জন্য আমরা সরকারকে সময় দিয়েছি। প্রয়োজনে আরো দেবো। তবে মৌলিক সংস্কার করে যৌক্তিক সময় নির্বাচন দিতে হবে। ২০২৪ সালের জুলাই গণহত্যার বিচার করতে হবে। আমরা আইন হাতে তুলে নিতে চাই না। পরাজিত শক্তি এখনও বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে মহানগরী জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
শফিকুর রহমান বলেন, ভারতীয় মিডিয়ায় মিথ্যাচার চালিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চেয়েছিলো।কিন্ত এদেশের মানুষ তাদের সে পাতা ফাঁদে পা দেয়নি। দেশের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কাউকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করতে চাই না। সবার পরিচয় হবে আমরা বাংলাদেশি। কুমিল্লা নামে বিভাগ না দেয়ায় বিগত সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন নামের কারণে বিভাগ না দিয়ে একটি জেলার মানুষের প্রতি জুলুম করা হয়েছে। দেশের এক ইঞ্চি মাটির প্রতি অবজ্ঞাকারী কোনো ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা নেই। তিনি কুমিল্লা নামে বিভাগ বাস্তবায়নের দাবি জানান। এছাড়াও কুমিল্লা বিমানবন্দর সচলের যৌক্তিকতাও তুলে ধরেন তিনি।
জামায়াত আমির বলেন, গত সাড়ে ষোল বছর আদালত আঙ্গিনা ছিলো বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের দখলে। মূলত পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের অস্তিত্ব ধ্বংস করার মিশন শুরু হয়। এরপর ধাপে ধাপে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিলো না। বিশেষ করে জামায়াতের ওপর সবচেয়ে বেশি অবিচার করা হয়। আমাদের শীর্ষ নেতাদের একে একে মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেয়া হয়। অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের কারাগারের রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়। আমাদের কার্যালয়গুলো অন্যায়ভাবে বন্ধ রাখা হয়। তবে এতো নির্যাতনের পরও আল্লাহর রহমত ও নেতাকর্মীদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা টিকে আছি।
এসময় নেতাকর্মীদের চরিত্র গঠনের পাশাপাশি মানুষের যেকোনো তিনি ক্রান্তিকালে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন জামায়াতের আমির।
শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ নেই। দেশের প্রশ্নে জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ।
সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ আবদুর রব, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এড. জসিম উদ্দিন সরকার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৯ বছর পর আজ শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন। কুমিল্লার ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানে এই কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন পর সম্মেলনকে ঘিরে পুরো জেলাজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। পথে পথে লেগেছে পোস্টার-ব্যানার। মহাসড়কের ওপরেও উড়ছে ব্যানার। দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে কর্মসূচি করায় নেতারা যেমন আনন্দিত, অংশগ্রহণ করার প্রত্যাশায় উচ্ছ্বসিত ছিলেন কর্মীরাও।
কেকে/এইচএস