গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সহকারী রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম হীরার বিরুদ্ধে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। চাকরিজীবনে বেতন ও ভাতাসহ মোট আয় যেখানে অর্ধকোটি টাকার মতো, সেখানে তিনি কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, নজরুল ইসলাম তার প্রভাবশালী রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবহার করে টেন্ডার, নিয়োগ ও ভর্তি-বাণিজ্যের মাধ্যমে এই সম্পদ অর্জন করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে যোগদানের সময় তার পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্বল। তার বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর এবং তারা গোপালগঞ্জ শহরে একটি টিনশেড বাড়িতে বসবাস করতেন। অথচ বর্তমানে তিনি গোপালগঞ্জ শহরের মিয়াপাড়ায় প্রায় ১০ কোটি টাকার দুটি বহুতল ভবনের মালিক। এর একটি ভবনে তিনি নিজে থাকেন।
এছাড়াও শহরের রঘুনাথপুর রোডে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ শতাংশ জমি এবং মাদারীপুরে হাউজিং প্রকল্পে ১৭ লাখ টাকায় দুটি প্লট ক্রয় করেছেন। ২০১৫ সালে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি কিনেছেন এবং ব্যাংকে রয়েছে কোটি টাকার এফডিআর।
তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে পোষ্য কোটায় ভুয়া পরিচয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি এবং ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে ৪৯টি কম্পিউটার চুরির অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে চাকরি দেওয়ার নামে বিপুল অর্থ আত্মসাতের সাথেও তার নাম জড়িত। এসব দুর্নীতিতে তার সহযোগী ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহিষ্কৃত সহকারী একান্ত সচিব গাজী হাফিজুর রহমান লিকু।
গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে নজরুল ইসলাম হীরা অফিস করছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই তিনি অনুপস্থিত রয়েছেন। এর পরও নিয়মিতভাবে বেতন গ্রহণ করছেন।
তার বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি থাকার অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান বলেন, আমি বিষয়টি এখনও ভালোভাবে জানি না। রবিবার অফিসে গিয়ে বিস্তারিত জানার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, তার অনুপস্থিতি এবং আইনি বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, তার দুর্নীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারা দ্রুত তার বিচার এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তার প্রভাব এবং দুর্নীতি বন্ধ না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আরও খারাপ হতে পারে।
তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন এবং পরে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
কেকে/এএম