বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫,
২৬ পৌষ ১৪৩১
বাংলা English

বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হলেন খালেদা জিয়া      রাজউকের প্লট নিয়ে শেখ হাসিনার পরিবারের ক্ষমতা অপব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে দুদক      রাফির অ্যাকাউন্টে ৩২ কোটি টাকা লেনদেনের খবর, যা বললেন হাসনাত      রংপুরে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করা এসপি শাহজাহানের শাস্তি দাবি      জুলাই বিপ্লবের প্রেরণা নিয়ে বৈষম্যবিহীন রাষ্ট্র চাই: সারজিস      দাবানলে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, জরুরি অবস্থা জারি      মোবাইল-মানিব্যাগ নিজ দায়িত্বে রেখে পুলিশকে সহযোগিতার অনুরোধ      
গ্রামবাংলা
চুয়াডাঙ্গা হানাদার মুক্ত দিবস আজ
শামসুজ্জোহা পলাশ, চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশ: শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম  (ভিজিটর : ১৫৬)
ছবি: প্রতিনিধি

ছবি: প্রতিনিধি

৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় চুয়াডাঙ্গা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন চুয়াডাঙ্গা ছিল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গণের প্রধান কার্যালয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সূতিকাগার বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানীও ছিল চুয়াডাঙ্গা। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই দিনটিকে স্থানীয়ভাবে চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি সহ অংগসঠন ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে হানাদার বাহিনীর নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞের পরই চুয়াডাঙ্গার হাজার হাজার মুক্তিপাগল দামাল ছেলেরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন। একই রাতে যশোর সেনানিবাস হতে এক দল সৈন্য কুষ্টিয়া শহর দখল করে নেওয়ার খবরে মুক্তিযোদ্ধারা শহর রক্ষার জন্য শহরের প্রবেশ পথগুলোতে গাছের ডাল ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। একই সঙ্গে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকা থেকে আনসার, মুজাহিদ ও স্বেচ্ছাসেবকদের শহরের টাউন হলে একত্রিত করে চুয়াডাঙ্গা ট্রেজারি থেকে সকল অস্ত্র ও গোলাবারুদ তাদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা মজবুত করা হয়।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গা শত্রুমুক্ত থাকার খবর শুনে তৎকালীন অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ভারত গমনের উদ্দেশ্যে একমাত্র সঙ্গী ব্যারিস্টার আমির-উল-ইসলামকে নিয়ে ৩০ মার্চ চুয়াডাঙ্গায় আসেন। এসময় তিনি স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে চুয়াডাঙ্গাকে যুদ্ধকালীন সময়ের জন্য বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা দেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই সীমান্তবর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলা মুক্ত থাকার সুবাদে ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা হয়ে ওঠে বাংলাদেশের রণাঙ্গনের অন্যতম যুদ্ধাঞ্চল। বিদেশি সংবাদিকদের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা ডেটলাইনে বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা পাকিস্তানি বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয়।

৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গার ওপর প্রথম বিমান হামলা চালানো হয়। এরপর ১০ এপ্রিল ভারতের আগরতলায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ২৮ জন সংসদ সদস্যের (এমপি) উপস্থিতিতে এক সভায় অস্থায়ী সরকারের রাজধানী ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল চুয়াডাঙ্গায় করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। যদিও সিদ্ধান্তটি নিরাপত্তাজনিত কারণে গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেই খবরটি দ্রুত বিদেশি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলশ্রুতিতে পাকিস্তানি বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয় এই চুয়াডাঙ্গা। এরপরই মূলত চুয়াডাঙ্গার ওপর ব্যাপকভাবে বিমান হামলা চালাতে শুরু করে হানাদার বাহিনী। একই সঙ্গে যশোর সেনানিবাস থেকে হানাদার বাহিনীর একটি দল ১৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় প্রবেশ করে। চুয়াডাঙ্গায় প্রবেশের পরই হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অগণিত মানুষকে হত্যা করে শহর দখলে নেয়। এ খবরে দ্রুত দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনের সদর দপ্তর চুয়াডাঙ্গা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধকালীন চুয়াডাঙ্গার তরুণদের একত্রিত করে ২২ এপ্রিল ভারতের হৃদয়পুর শিবিরে ১২০ জন যুবক নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম ক্যাম্প চালু করা হয়। যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১১ জুলাই বাংলাদেশের সমগ্র যুদ্ধাঞ্চলকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তারা যে যেখানে যুদ্ধরত ছিলেন, তাঁকে সে অঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই এলাকার সব উপদলকে একক অধিনায়কত্বের আওতায় আনা হয়। চুয়াডাঙ্গা ৮ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত হয়। চলতে থাকে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রণাঙ্গনে সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধ। ৫ আগস্ট চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদহের কাছে বাগোয়ান গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে পিণ্টু, হাসান, খোকন, কাশেম, রবিউল, রওশন, তারিক ও আফাজউদ্দিন নামে আটজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাদের জগন্নাথপুর গ্রামের দুটি কবরে দাফন করা হয়। যা এখন আটকবর নামে পরিচিত।

এছাড়া ৭ আগস্ট জীবননগর থানার ধোপাখালি সীমান্তে নিয়মিত বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাঁচজন শহীদ হন। সেপ্টেম্বরে ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার হিসেবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল মনজুর দায়িত্ব নেন। তিনি যুদ্ধ বেগবান করা ও বিজয় অর্জনের লক্ষে যুদ্ধ কৌশলে পরিবর্তন আনেন। ২৬ নভেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে জীবননগরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ৪ ডিসেম্বর মুক্ত হয় দর্শনা। এরপর ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গা থেকে শত্রুদের হটিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিকামী মানুষ। বিজয়ের বেশে চুয়াডাঙ্গায় প্রবেশ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। স্বদেশের পতাকা উড়িয়ে আনন্দ-উল্লাস করে এলাকার মুক্তিকামী মানুষ।

তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে ৫২ বছর। অথচ মুক্তিযুদ্ধের বহুল আলোচিত চুয়াডাঙ্গায় কোনো স্মৃতিসৌধ নেই। ১৯৯৪ সালে স্থানীয় শহীদ হাসান চত্বরে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হলেও তা অবৈধ স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করে ২০০৪ সালে ভেঙে ফেলা হয়।

সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আজগর ফটিকসহ বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, ৭১-এর ৩০ মার্চ চুয়াডাঙ্গাকে অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করে যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এ ঘোষণা দিলেও এখনও সামান্য অধিকার থেকে বঞ্চিত জেলাবাসী।

কেকে/এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  চুয়াডাঙ্গা হানাদার মুক্ত দিবস   চুয়াডাঙ্গা   জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

সাভারে বাস-অ্যাম্বুলেন্স সংঘর্ষে আগুন, পুড়ে নিহত ৪
ইসলামী আন্দোলন হবিগঞ্জ জেলার নেতৃত্বে পুনরায় সোহেল—শামছুল হুদা
লোহাগাড়া ইসলামি ছাত্র মজলিসের শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সম্পন্ন
লামায় গলায় ফাঁস দিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা
বিষাক্ত শীতলক্ষ্যার কাছে যেতেও ভয় পায় মানুষ: ডিসি মাহমুদুল হক

সর্বাধিক পঠিত

রাতে জ্বলে না সড়ক বাতি, নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পৌরবাসী
রাফির অ্যাকাউন্টে ৩২ কোটি টাকা লেনদেনের খবর, যা বললেন হাসনাত
‘শহিদদের স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়ুন অথবা দায়িত্ব ছেড়ে দিন’
নিয়ামতপুরে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন
নীলসাগর গ্রুপের আয়োজিত এসপিএল ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন শাহীপাড়া ক্যাপিটালস

গ্রামবাংলা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝