নিয়ন্ত্রনহীন বাজারের লাগাম ধরতে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। আমদানিতে শুল্ক কমানোর সুপারিশও এসেছে। সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে বাজার তদারকি। এতে কমতে শুরু করেছে পণ্যটির দাম।
মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে ডিমের দাম প্রতি ডজনে ৩০ টাকা কমেছে। বর্তমানে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। যা দুই দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকায়।
আজ শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজার এবং বিভিন্ন পাড়া,মহল্লায় ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়। পাইকারি আড়ত কাপ্তান বাজারে তা ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও দুই দিন আগে খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিম কিনতে ১৮০-১৯০ টাকা লাগত।
ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রতিক বন্যার কারণে পোলট্রি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ডিমের সরবরাহ কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে দামে। তবে ডিম উৎপাদনে পরিপূরক অন্যান্য খাদ্যপণ্যের উচ্চদামকে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ।
কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করেও ডিমের দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করে তারা আরো বলেন, সরকারের এসব পদক্ষেপে ডিমের দাম কিছুটা কমলেও তা হবে সাময়িক। ডিমের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হলে ডিমের উৎপাদন খরচ কমানো ও সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
সম্প্রতি বাজারে ডিমের দাম কয়েক দফায় বেড়েছে। একপর্যায়ে ঢাকার বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিমের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ সেপ্টেম্বর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সম্প্রতি ডিমের ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণ করে দেয়। প্রতিটি ডিমের দাম উৎপাদন পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা (ডজন ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা) বেঁধে দেওয়া হয়। তবে বাজারে এখনও ১৫০ টাকা দরে ডিম বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ এখন সরকারের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্যের চেয়েও ডজনে প্রায় ৮ টাকা বেশি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে।
ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিমের বাজারে এখনো শক্ত একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে। আওয়ামী লীগের পতন হলেও বর্তমান সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তা না হলে সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও কেন কার্যকর হয়নি।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে দেখা গেছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে ডিমের দাম বছরজুড়ে ডজন ৮০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে ছিল। যুদ্ধ শুরুর ছয় মাসের মাথায় ডিমের দাম বেড়ে ১২৫–১৩৫ টাকা হয়, যা গত বছরের শেষ নাগাদ ১৫০–১৬৫ টাকায় পৌঁছায়। এরপর অনেকটা কাছাকাছি দামেই ডিম বিক্রি হয়ে আসছিল। যদিও সম্প্রতি এই দাম ১৮০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুরগির ডিম উৎপাদন খরচের ৮০–৮৫ শতাংশ যায় পোলট্রি খাদ্যের দামের পেছনে। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পর বেড়ে যাওয়া পোলট্রি খাদ্যের দাম এখন কমেছে। তবে কমেনি ডিমের দাম। যদিও খাদ্য উৎপাদনকারীরা বলছেন, মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে খাদ্যের দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে অন্তর্বর্তী সরকার গত ৮ অক্টোবর সাতটি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু ডিম এসেছে সামান্যই। টানা চার দিন সরকারি ছুটি থাকায় আমদানি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ডিম আমদানি খুব বেশি হয়নি।
কেকে/এজে