কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে হার না মানা এক অদম্য কিশোরী আমেনা খাতুন। নেই একটি পা। সকল প্রতিবন্ধকতাকে ছাপিয়ে স্বপ্নজয়ের আশায় জীবনযুদ্ধে অদম্য এই কিশোরী।
আমেনা উপজেলার কালিগঞ্জ ইউনিয়নের ইসমাইল হোসেনের মেয়ে। সে জানায় ছোট বেলায় পায়ে হোচট খেয়ে শুরু হয় পায়ের ব্যাথা। পরিবারে অর্থনৈতিক সংকট থাকায় ঠিকমতো চিকিৎসা করতে না পারায় কিছুদিন পর পা ফুলে যায়। চিকিৎসকের মাধ্যমে জানতে পারে পায়ে মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত। উন্নত চিকিৎসার অভাবে নিরুপায় হয়ে এক সময় কেটে ফেলতে হয় তার ডান পা। সেখানেও খরচ হয় অনেক টাকা। স্থানীয়দের সহযোগিতায় অপারেশনের মাধ্যমে পা কেটে ফেলে তার। আর এতেই স্বপ্নভঙ্গ হয় আমেনার। শুরু হয় পঙ্গুত্ব জীবনযাপন।
পঙ্গুত্ব নিয়ে সমাজের নানা বাঁকা কথায় কান ভাড়ি করে তার। লেখাপড়া করতে চাইলেও পরিবার থেকেও ছিলো বাধা। কিন্তু হার মানার পাত্রী নন আমেনা খাতুন। প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ়তা তাকে অনুপ্রেরণা যোগায় নতুন করে বাঁচবার। এ সময় পাশে দাঁড়ায় মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি। প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহযোগিতায় মহিদেবের মাধ্যমে সেলাই প্রশিক্ষণ আর বাল্যবিয়ে সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক প্রশিক্ষণ পেয়ে বেড়ে যায় মনের জোর। এভাবেই শুরু হয় নতুন পথচলা। শুরু করেন লেখাপড়া। বাবার দারিদ্রতার কারণে লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হিমশিম খেলেও সেলাই মেশিন চালিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ চালান আমেনা। এখন নিজের লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি সংসারের খরচেরও যোগান দেয় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া অদম্য এই কিশোরী।
আমেনার মা শাহিদা বেগম জানায়, মেয়েটা এক দুর্ঘটনায় পায়ে চোট পায়। এক সময় পা কেটে ফেলতে হয়। চিকিৎসা ব্যয় বহনে সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়েন তারা। এখন এক পা ছাড়াই সে মনের জোরেই বিভিন্ন কাজ করে তাদের মেয়ে। বাল্যবিয়ে নিয়েও কাজ করে।
স্থানীয় মর্জিনা বেগম জানায়, প্রতিবন্ধী হয়েও আমেনা যেভাবে চলাফেরা করে বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্ম করে, এক পায়ে সেলাইমেশিন চালায় এটা দেখে সবাই অবাক। তাকে দেখে অনেক কিছু শেখার আছে বলেও জানান তিনি।
মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতির সিএনবি প্রকল্পের কালিগঞ্জ ইউনিয়ন ফিল্ড ফেসিলিটেটর ইশরাত জাহান জানায়, আমি এখানে বিভিন্ন কাজ করতে এসে জানতে পারি- আমেনা খাতুন অসহায় জীবন যাপন করছে। তার একটি পা নেই। পরে তার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম সে প্রতিবন্ধী হলেও তার ইচ্ছাশক্তি অনেক। পরে তাকে আমরা প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসি। এখন সে প্রতিবন্ধীকতাকে জয় করে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের খরচ চালাতে সহায়তা করে।
এছাড়াও আমেনা সমাজের নানা অসঙ্গতি ও বাল্যবিয়ে নিয়ে কাজ করছে। এখন সে তার এলাকার পরিচিত মুখ।
কেকে/এমআই