মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৭৯৫ জন রোহিঙ্গাকে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগে ভিত্তিতে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের সরকারি নিবন্ধন আইডি বন্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আহসানুল আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলার স্থানীয় সরকার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চরকাটারী ইউনিয়নে ৭৯৫ জনের অবৈধ জন্মনিবন্ধন দেওয়া হয়। গত ১০ মাসের মধ্যে হওয়া ওই জন্মনিবন্ধনগুলো বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি চিঠি দেওয়া হয়েছে। পরে জন্ম নিবন্ধনগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, চরকাটারী ইউনিয়ন পরিষদে দীর্ঘদিন ধরে কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিল না। উপজেলার পার্শ্ববর্তী বাচামারা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন এই ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত ২০ অক্টোবর নতুন প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সেলিম হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পরই অবৈধ জন্মনিবন্ধনের বিষয়টি সবার নজরে আসে। পরে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও ইউপি সদস্যরা অভিযোগ করে জানান, চেয়ারম্যান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা নাগরিকদের অবৈধ জন্মনিবন্ধন করেছেন। তবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এসব সনদ দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জলিল, ওয়াজ উদ্দিন ও আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, ৭৯৫ জনের যে জন্মনিবন্ধন হয়েছে, তারা কেউ আমাদের এলাকার বাসিন্দা না। চেয়ারম্যান, সচিব ও উদ্যোক্তারা টাকার বিনিময়ে অবৈধ জন্মনিবন্ধন করেছেন।
ইউপি সদস্য মো. জয়েদ আলী মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, ৭৯৫ জনের অবৈধ এ জন্মনিবন্ধন হওয়ায় আমাদের চরাঞ্চলের মানুষের ক্ষতি হবে। এর দায় চেয়ারম্যান, সচিব ও উদ্যোক্তার।
এ বিষয়ে চরকাটারী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে উদ্যোক্তা আব্দুল জলিল মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে চরকাটারী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী বলেন, আমি কম্পিউটারের কাজ তেমন বুঝি না। পরিষদের উদ্যোক্তা আব্দুল জলিল মন্ডলের কাছে আমার জন্মনিবন্ধনের আইডির পাসওয়ার্ড থাকত। সেই সুযোগেই উদ্যোক্তা আব্দুল জলিল মন্ডল জালিয়াতি করে এ রকম অবৈধ জন্মনিবন্ধন করেছে।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আহসানুল আলম বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই চেয়ারম্যান ও সচিবের নিবন্ধন আইডি বন্ধ করে দিয়েছি। বিষয়টি লিখিত আকারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অবগত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে এখনো তদন্ত-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমাদের হাতে এসে পৌঁছেনি।
কেকে/এইচএস