মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদী থেকে নিয়মিত বালু উত্তোলনের ফলে নদী তীরে ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় বালুমহাল বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ইমামপুর ইউনিয়নের বেরু মোল্লাকান্দি গ্রাম সংলগ্ন নদীর পাড়ে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে গ্রামটির প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মানববন্ধন চলাকালীন সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান। এ সময় বালুমহাল বন্ধে এলাকাবাসীর যেকোনো পদক্ষেপে তিনি পাশে থাকবেন বলে জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার চর কালীপুরা, চর রমজানবেগ ও ষোলআনী গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে বালু মহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। ইজারার শর্ত অনুযায়ী নদীর ১২৮ একর এলাকায় বালু উত্তোলন করা যাবে। বালুমহালটির ইজারা পেয়েছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ সরকার নির্ধারিত জায়গার বাহিরে গিয়ে নদীর তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে সন্ধ্যার পর এবং ভোরবেলা নদীর তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলনের ফলে কয়েক শো বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে আরও প্রায় অর্ধশত বিঘা ফসলি জমি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জুলহাস প্রধান বলেন, ‘বালুমহাল চালুর পর নদীর তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলনের কারণে আমার ৮৬ শতাংশ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি প্রতিবাদ করায় ডাকাত সর্দার বাবলা আমাকে মারধর করে। গুন্ডা বাহিনীর হামলা-মামলার ভয়ে ভুক্তভোগী অনেকেই কথা বলতে চান না’।
স্থানীয় বাসিন্দা হাসি বেগম বলেন, ‘সরকার যে জায়গায় বালুমহাল ইজারা দিয়েছে সে জায়গা ছেড়ে রাত হলেই ড্রেজারগুলো তীরে চলে আসে। গত কয়েক মাসে বালু উত্তোলনের কারণে অন্তত ২০০ বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অসংখ্য মানুষ জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কথা বললেই এলাকাবাসীকে মারধর করা হয়, এলাকা ছাড়া করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। জীবনের ভয়ে কেউ কিছু বলে না। সরকারের প্রতি আবেদন- আপনারা এই বালুমহালটি বন্ধ করে দিন’।
স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল আউয়াল বলেন, ‘আমি আবু তাহের সাহেবের জমিজমা দেখাশোনা করি। আমার জানা মতে গত কয়েক মাসে আবু তাহের সাহেবের প্রায় ২৩১ শতাংশ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আজ যখন খবর পেলাম এ বিষয়ে একটি প্রতিবাদ সভা হচ্ছে- আমি ছুটি এসেছি’।
বিষয়টি সম্পর্কে তাদের বক্তব্য জানতে ইজারাদার ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের একাধিক কর্মকর্তার মুঠোফোন কল করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার বলেন, মানববন্ধনের বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। তারা যদি নদীর পাড় ঘেঁষে বালু উত্তোলন করে থাকে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’।
কেকে/এমআই