বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ৩১ দফা দু'বছর আগে উপস্থাপন করা হয়েছিল তখন এটি ২৭ দফা ছিল। তখন ফ্যাসিস সরকার চেয়েছিল আমাদের এই ৩১ দফা যাতে মানুষের কাছে না পৌঁছায়। আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের জায়গা থেকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। আজকে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত আমরা আমাদের আলোচনা গুলো মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছি, আপনাদের কাছে বলতে পারছি।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকালে ফরিদপুর সদর উপজেলা কমপ্লেক্স হলে দলের এক কর্মশালায় তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি শীর্ষক ফরিদপুর বিভাগীয় কর্মশালার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
তারেক রহমান, আমরা যদি আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে চাই, প্রত্যেকটি নেতাকর্মী সহযোগিতা আমার প্রয়োজন। সহযোগিতার প্রথম শর্ত হচ্ছে জনগণকে আস্থা রাখা। বোনকে যদি আস্থায় রাখতে হয়। আপনি বিগত ১৫ বছরের অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে আজকে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন। এখন বিষয় হচ্ছে জনগণকে আস্থায় রাখা। জনগণকে আস্থায় রাখতে রাতে আমাদেরকে সেভাবেই কথা বলতে হবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ কিছু কিছু ভুল করছে সেই ভুলগুলো তাদেরকে শুধরে দিতে হবে। তাদেরকে সতর্ক করে দিতে হবে, তাদেরকে সাবধান করে দিতে হবে। আমাদেরকে আরও কঠোর হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটি রাজনৈতিক দল। আর একটি রাজনৈতিক দলের পুঁজি হচ্ছে আমরা কর্মী। এবং রাজনৈতিক দলের মানুষের আস্থা। দলের পুঁজি হচ্ছে জনগণের আস্থা মানুষের আস্থা। দলের পুঁজি যদি নষ্ট হয়ে যায় দল থাকে না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, জনগণের আস্থা ধরে রাখতে যে যে কৌশল নিতে হয় তা তা গ্রহণ করতে হবে। এটাই হোক আজকে আমাদের প্রতিজ্ঞা।
তিনি বলেন, এক মাস আগে আমরা রি লাউঞ্চিং করেছি ৩১ দফা ঢাকাতে। আমরা আমাদের সঙ্গে যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছিলেন তাদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা ২৭ দফা পথে থেকে ৩১ দফা তে রূপান্তরিত করেছি। কিছু কিছু দফা আমরা যুক্ত করেছি।
তিনি আরও বলেন, আজকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি স্বনামধন্য ব্যক্তিরা রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছেন। বিভিন্ন জনতাদের অবস্থান থেকে বলেছেন। আমাদের ৩১ দফার মধ্যে সবগুলো প্রস্তাবে আছে। হয়তো এদিক শব্দের এদিক সেদিক আছে। আমরা যেসব বিষয়গুলি বলেছি তারাও একই বিষয়গুলো বলেছেন কিন্তু হয়তো ভিন্নভাবে বলেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারকে ইঙ্গিত করে
তারেক রহমান বলেন, আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল এই স্বৈরাচার সরকারের পতন হবে এবং হতেই হবে।
তিনি বলেন, আমরা যে ৩১ দফা দিয়েছি এই ৩১ দফায় সবকিছু না কোন ব্যক্তি বা সংগঠন যদি মনে করে, সংযোজন, বিয়োজন করা দরকার আমরা বিবেচনা করে যদি দেখি এটি ভালো একটি প্রস্তাবনা তাহলে যুক্ত করা হবে। এখনই ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা, করতে পারবো না যখনই জনগণের সমর্থন নিয়ে আমরা সরকার গঠন করতে পারবো তখনই এর বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের এই ৩১ দফা গুলোকে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে জনগণের কাছে প্রান্তিক মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা অর্জন তখনই করতে পারবো, যখন জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারবো। আমাদের উপর জনগণের আস্থা আছে। জনগণের আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার এবং আমাদের। আস্থা ধরে রাখতে সকলে মিলে চেষ্টা করতে হবে। স্বৈরাচার কে যে আমরা পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি সকলে মিলে। বিএনপি যেমন একা করেনি সমাজের সকল রাজনীতিক দল এবং সমাজের সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে নিয়েই এই পতিত স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।
তিনি বলেন, একটি ভাল কাজ বড় কাজ একা কেউ করতে পারে না। সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই করতে হয়।
দল আমি একা না, দল আপনি একা না, দল আমরা সবাই। বিএনপি'র প্রতি যে মানুষের আস্থা আছে এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। আমরা একটি রাজনীতিক দল হিসেবে একটি নিরপেক্ষ স্বাধীন নির্বাচন চাই। মানুষ যাতে ভয়-ভীতিহীন ভাবে নিরাপদে ভোট দিতে পারে। জনগণের রায় এবং সিদ্ধান্ত অবশ্যই আমরা মেনে নেব। ওই পর্যন্ত তো আমাদের যেতে হবে। সবাইকে এর জন্য ভূমিকা রাখতে হবে। এজন্য আমাদের ৩১ দফা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
তিনি বলেন, ৩১ দফাকে পারায় মহল্লায় নিয়ে যান। আপনার ফরিদপুর আপনার নিজের গণ্ডির মধ্যেই নিয়ে যান। আমরা জনগণের জন্য কি করতে চাচ্ছি এটা যদি না জেনে মানুষ কেন আমাদেরকে সমর্থন দেবে? বিএনপি একটি বড় দল সেই জন্যই কি সমর্থন দেবে? এখন কিন্তু মানুষের ধারণা পাল্টেছে মানুষ জানতে চায় তার জন্য আপনি কি করছেন? কাজেই আমাদেরকে প্রত্যেকটি শ্রেণি পেশা মানুষের কাছে যেতে হবে। আমরা একবারে সবকিছু করতে পারব না। কৃষিতে যা করতে চাচ্ছি, নারীদের জন্য যা করতে চাচ্ছি আমরা হয়তো একবারে করতে পারব না আমরা সূচনা করব।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেশে একটি জবাবদিহিতার পরিবেশ করতে চাচ্ছি।আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জবাবদিহিতা শুধু কি প্রধানমন্ত্রী জবাবদিহিতা করবে শুধু কি মন্ত্রীরা জবাবদিহিতা করবে? নো। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য যেমন জবাবদিহিতা করবে প্রধানমন্ত্রী ও করবে পৌরসভার চেয়ারম্যান যেমন জবাবদিহিতা করবে মন্ত্রীসহ জবাবদিহিতা করবে একইভাবে। প্রত্যেকটি জায়গায় জবাবদিহিতা করতে হবে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে গত ১৫ বছরে দেশে জবাবদিহিতা ছিল না বলেই অর্থ পাচার, লুটপাট ও দুর্নীতি হয়েছে। আগামী দিনে দেশে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
কেকে/এইচএস