আজ মিরসরাই হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর মিরসরাই অঞ্চল শত্রুমুক্ত হয়েছিল। ওই দিন মিরসরাইয়ের মুক্তিকামী জনতা পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের হটিয়ে মিরসরাইকে শত্রুমুক্ত করেছিলেন।
দীর্ঘদিন মরহুম সাংবাদিক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন স্থানীয় মাসিক মিরসরাই পত্রিকার ব্যানারে দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যের সাথে পালন করতো। পরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধার প্রতি বছর এই দিবস পালন করতো। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে এ বছর দিবসটি উদযাপনে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর সকাল বেলা মুক্তিযোদ্ধা জাফর উদ্দিন আহম্মদের বিএলএফ গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় দু’শ মুক্তিযোদ্ধা মিরসরাই সদরের পূর্ব দিক ছাড়া বাকী তিন দিক ঘিরে ফেলে। বেলা প্রায় ১১টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক থেকে সংগঠিত হয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে এক যোগে আক্রমন শুরু করে। শুরু হয় পাক সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি বিনিময়। পাক সেনাদের অবস্থান ছিল মিরসরাই হাই স্কুল, মিরসরাই থানা, মিরসরাই সি.ও. অফিস। বৃষ্টির মতো গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে পাক সেনারা পলিয়ে যায়।
পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধারা থানায় প্রবেশ করে পাক সেনাদের আটটি রাইফেল উদ্ধার করে। পাক সেনারা চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে গেছে বলে পরে জানা যায়। চট্টগ্রামের কোন অঞ্চল তখনো মুক্তির স্বাদ পায়নি। মিরসরাই শত্রুমুক্ত হয়েছে-এ কথা বাতাসে দ্রুত ছড়িয়ে যায় মিরসরাইয়ের সর্বত্র। মুহুর্তেই চতুর্দিক থেকে জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত মিছিল আসতে থাকে। হাজারো জনতার ঢল নামে মিরসরাই হাই স্কুল মাঠে।
মৌলভী শেখ আহম্মদ কবির কোরআন তেলাওয়াত করেন। পরে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা জাফর উদ্দিন আহাম্মদ চৌধুরীসহ সবাই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। ঘোষণা করা হয় মিরসরাই ভূখন্ড পাক বাহিনীমুক্ত একটি স্বাধীন এলাকা। সে থেকে ৮ ডিসেম্বর মিরসরাইয়ে উদ্যাপিত হয়ে আসছে হানাদারমুক্ত দিবস।
মিরসরাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে এ বছর কোনো আয়োজন করা হয়নি। তাছাড়া এই দিনটি আঞ্চলিকভাবে পালন করা হতো।’
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন জানান, এটি কোনো জাতীয় দিবস না। স্থানীয় ইতিহাসের একটি অংশ। প্রতি বছর এখানকার মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের প্রজন্মের উদ্যোগে দিবসটি উদযাপন করা হতো। উপজেলা প্রশাসন সবসময় সহযোগিতা করতো। এবছর মুক্তিযোদ্ধা অথবা তাদের প্রজন্মের কেউ যোগাযোগ করেনি। তারা যদি করতে চায় তাহলে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।
কেকে/এআর