বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরা, তীব্র তাপদাহ, নদীভাঙন, বন্যা, শিলাবৃষ্টি এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায়ই সংঘটিত হয়। ফলে জানমাল, ফসল ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। বিত্তশালীদের পক্ষে এই ক্ষতি সামাল দেওয়া সম্ভব হলেও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য তা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যাদের গবাদিপশু ও ঘরবাড়ি প্রধান সম্পদ।
সম্প্রতি ভারী বৃষ্টিপাত এবং ভারতের উজানের পানির কারণে দেশের বেশ কয়েকটি জেলা প্লাবিত হয়েছে। এতে ফসল ও গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং হাজারো মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এই কঠিন সময়ে দেশের বিভিন্ন সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনগুলো বন্যার্তদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এ ধরনের সহায়তা কার্যক্রমে পিছিয়ে ছিল না। বন্যার্তদের জন্য সহায়তা প্রদান করতে “অ্যাগ্রি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ” এবং “অ্যানিমেল সেভিয়ার্স” নামে দুটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের এক মাসের বৃত্তির টাকা দান করেন। প্রাথমিকভাবে ত্রাণ বিতরণ ও শুকনো কাপড় বিতরণ করা হলেও পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়।
দক্ষিণাঞ্চলের খাদ্য সংকট মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ একর জমিতে ধানের বীজ বপন করে তা প্রায় ১ হাজার কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়। এছাড়া সাম্প্রতি লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলায় ১৩টি পরিবার এবং কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের ২৩টি পরিবারের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক মাদি ছাগল বিতরণ করে “অ্যানিমেল সেভিয়ার্স”। কুমিল্লা জেলার কনকাপৈত উপজেলায় ৭২টি পরিবারের মধ্যে ৫টি করে মুরগি বিতরণ এবং গবাদিপশুর চিকিৎসা সেবাও প্রদান করা হয়।
শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায় ৯৩টি পরিবারের মাঝে ছাগল এবং সবজির চারা বিতরণ করে “অ্যাগ্রি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ”। এছাড়াও কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় ৪০ জন কৃষক এবং সানিয়াজান উপজেলায় আরও ৪০ জন কৃষকের মাঝে ভুট্টার বীজ ও সার বিতরণ করা হয়। প্রতিটি কৃষকের মাঝে ৩ কেজি ভুট্টার বীজ এবং ৯০ কেজি সার দেওয়া হয়।
ত্রাণ সহায়তা পেয়ে এক বন্যার্ত কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, “ঘুম থেকে উঠে দেখি পানির স্রোতে আমার ঘর ডুবে গেছে। হাঁস-মুরগি সব ভেসে গেছে। অধিকাংশ ঘরটাও ভেঙে পড়েছে। পুনর্বাসনের জন্য ছাগল পেয়ে অনেক উপকৃত হলাম। এই ঋণ কখনও শোধ করতে পারব না।”
ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, “বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো মানবধর্মের অংশ। কোনো লাভের জন্য আমরা কাজ করিনি। আমাদের মানবিক দায়িত্ব থেকেই কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও এ ধরনের সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই।”
কেকে/এএম