নীলফামারীর ডোমারে টিএসপি সারের সংকট তীব্র আকার ধারন করেছে। মিলছে না সরকার নিধারিত দামে সার। অতিরিক্ত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে ইউরিয়া, ডিএপি, এমওপি, টিএসপি সার। ডিলারদের কারসাজির কারণেই কৃষকদের বাড়তি এ অর্থ গুনতে হচ্ছে। প্রায় দোকান গুলিতে সাইনবোর্ড নাই, বিক্রয় রেজিস্ট্রার নেই, ক্যাশ মেমো ব্যবহার করা হয় না, কৃষকদের মোবাইল নম্বর লেখা হয় না।
জানা গেছে, এ বছর রবিশস্য মৌসুমে সরিষা ১২ শত ১৩ হেক্টর, রসুন ৫৩ হেক্টর, পেঁয়াজ ১৩৫ হেক্টর, গম ৬৬০ হেক্টর, ভুট্টা ৩৮ শত হেক্টর, বোরো ৩৭৮০ হেক্টর, আলু ১৫৩৫ হেক্টর, ও অন্যান্য সহ মোট প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। ওই জমির অনুকূলে সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পটাশ ১৭৫.৪৫ মে.টন,টিএসপি ৬১.০৫, ইউরিয়া ৭৬৬ মে.টন। নভেম্বরে বিএডিসি বরাদ্ধ ডিএপি ৬৬৮.০৫ মে.টন, টিএসপি ১১১ মে.টন,পটাশ ৩১৯ মে.টন।
কৃষক ন্যায্য মূল্যে সার পাওয়ার নিশ্চয়তার জন্য সার বিক্রিতে উপজেলায় বিসিআইসি ১১, বিএডিসি ২০ এবং খুচরা ১৪ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া রয়েছে।
সরকার নির্ধারিত বস্তাপ্রতি ডিএপি ১০৫০ টাকা,পটাশ ১ হাজার টাকা, টিএসপি ১৩৫০ টাকা।
সম্প্রতি মেসার্স রনজিৎ ট্রেডার্স বিএডিসি সার ডিলার সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সারের ব্যবসা পরিচালনা করছেন না। তিনি সেপ্টেম্বর এবং ২৪ মাসের (টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি) উত্তোলন করে সার কৃষক পর্যায়ে বিক্রয় না করে অবৈধ ভাবে অন্যত্র বিক্রয় করেছেন। এ নিয়ে অভিযোগ উঠলে তার দুই মাসের বরাদ্ধ বন্ধ করার সুপারিশ করা হয় জেলায়। রবিবার দুই দোকানে অভিযান চালিয়ে একলক্ষ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হলেও কৃষকরা বলেন সব দোকানে জরিমানা করা উচিত।
বাজারে নন ইউরিয়া সারের সরবরাহ কম জানিয়ে বেশি দাম নিচ্ছেন ডিলাররা। তারা সার উত্তোলন করে, গাড়ি অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়ায় সংকট বাড়ছে।
উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বোড়াগাড়ীর কাউয়াতলীর কৃষক জাকারিয়া হোসেন বলেন, ডিএপি সার ১১৮০ থেকে ১২০০,টিএসপি তিউনিসিয়া ২২৫০ থেকে ২৩০০, মরক্কো ১৮০০ থেকে ১৯০০, বাংলাদেশী ২১০০ থেকে ২২৫০,ইউরিয়া ১৩৮০ থেকে ১৪২০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। মেমো চাইলে বলে সার নাই। ডিলারদের কারসাজির কারণে এ ধরনের দাম বেশী দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
হরিণচড়া ইউনিয়নের শেওটগাড়ি গ্রামের দোলাপাড়ার কৃষক আব্দুল মতিন (৪৬) বলেন, আলু, সরিষা ও ভুট্টা গারবো (রোপন)। এতে টিএসপি সার লাগবে। সার ব্যবসায়ী শাহিনুরের দোকানে গেলে টিএসপি বাংলা, তিউনিসিয়া সার পাওয়া যাচ্ছে না। এ দুটোই ভালো। টিএসপি মিশর তেমন কাজ করে না। সেটা ১৭০০ চাচ্ছে। সে জন্য আর সার নেওয়া হয় নাই। কৃষি অফিসারের কাছে বললে তিনি ইউএনওর কাছে অভিযোগ করতে বলেন। খুচরা সার বিক্রেতা মেসার্স শামীম এ্যান্ড ব্রাদার্স এর প্রোপাইটার মৌ: শামীম আহম্মেদ বলেন, টিএসপি সারের সংকট চলছে। আমরা কোন রেজিস্ট্রারে হিসাব রাখি না। ক্যাশ মেমো দেই না,রেজিস্ট্রার নাই, কৃষকদের মোবাইল নম্বর আমরা রাখি না।
বিসিআই সার ডিলার মেসার্স শফিকুল ইসলাম এ্যান্ড ব্রাদার্স এর প্রোপাইটার মো: শফিকুল ইসলাম বলেন,বরাদ্ধ কম চাহিদা বেশী। বাংলা টিএসপি, তিউনিসিয়া টিএসপি ছাড়া অন্য কোন সার সংকট নাই।এ-সময় তিনি আরও বলেন, আমরা খুচরা সার বিক্রয় করি, তাই বিক্রয় রেজিস্ট্রার নেই, ক্যাশ মেমো ব্যবহার লেখা হয় না, কৃষকদের মোবাইল নম্বর লিখে রাখা হয় না।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো রফিকুল ইসলাম সারের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার ও টিএসপি সংকটের বিষয়ে বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ এ ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। সারের মুল্যের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। সম্প্রতি রনজিৎ ট্রেডার্স বরাদ্ধের সার অনুমতি ছাড়াই বিক্রি করায় তার বরাদ্ধ স্থগিতের সিদ্ধান্ত জেলায় প্রেরণ করা হয়েছে। মনিটরিং অব্যহত আছে।
কেকে/এআর