বাংলাদেশে ‘জাতির পিতা একটি ফ্যাসিস্ট কনসেপ্ট’ বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও প্রাবন্ধিক আব্দুল হাই শিকদার।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি অডিটোরিয়ামে ‘জুলাই বিপ্লবের ঋণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি।
আব্দুল হাই শিকদার বলেন, বাংলাদেশে জাতির পিতা একটি ফ্যাসিস্ট কনসেপ্ট, একটি বাজে কনসেপ্ট। জাতির পিতা করতে হলে ১৯৭০ সালে মাওলানা ভাসানীকে করা উচিত ছিল, কারণ তিনি প্রথম স্বাধীন পূর্ব বাংলার কথা বলেছিলেন। জাতির পিতা করতে হলে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ করা উচিত ছিল কারণ তিনিই বাংলা নামে প্রথম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। আমাদের দেশে জাতির পিতা বলে যাকে সম্বোধন করা সেখান থেকেই তৈরি হয়েছে শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিস্ট সরকার।
দেশ সংস্কারে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে তিনি আরও বলেন,স্বাধীনতা পর শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো নীতি গ্রহণ করা হয়নি। ছাত্রনেতাদের বলব, তোমরা শিক্ষাক্ষেত্রে একটি রূপরেখা নিয়ে কথা বলো। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও আমাদের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা জরুরি। ঘরে ঘরে ভারতীয় সংস্কৃতির চর্চা ঢুকে গেছে। এটি দেশের মধ্যে ভারতীয় কর্তৃত্ব তৈরি করেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, জুলাই বিপ্লবে যারা শহিদ হয়েছেন তারা যে স্বপ্নকে সামনে রেখে জীবন দিয়েছেন আমাদের সেগুলো স্মরণ করে কাজ করতে হবে। বিপ্লব পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে। এরজন্য শিক্ষার্থীদের দক্ষ হয়ে গড়ে ওঠার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য আলোচকদের মধ্যে ছিলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ড. আতিক মুজাহিদ ও শাবির ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রাজিক মিয়া।
সভায় অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, দেশব্যাপী যখন শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হচ্ছিল। শিক্ষক হিসেবে আমাদের চুপ থাকার সুযোগ ছিল না। আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ায়। এই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে আমরা কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, একাত্তরে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করি পরবর্তীতে সেটি একটা দল ও ব্যক্তি কেন্দ্রীক করা হয়েছিল। তাই চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। পাশাপাশি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে শত্রুদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই করা।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আতিক মুজাহিদ বলেন, সংবিধানে চারটি মুজিববাদী মূলনীতি ঢোকানো হয়েছে। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে একটি ধর্ম বানানো হয়েছে। এই আওয়ামী ধর্মের বিলোপ করতে হবে। এই জন্য তরুণদের দায় ও দরদ নিয়ে কাজ করতে হবে। এই আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পুনরায় কোনো ‘এ টিম’ কিংবা ‘বি টিম’ বা অন্য কোনো রূপে ফিরে না আসতে পারে- সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি জনতার দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে দেশ সংস্কার করতে হবে।
আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. এছাক মিয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএম সরওয়ারউদ্দীন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে শাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন।
কেকে/এজে