নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট
পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও পুলিশের গুলিতে নিহত শিবির কর্মীর লাশ ১১ বছর পর কবর
থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। উত্তোলনের সময় লাশের মধ্যে একটি গুলিও পাওয়া যায়।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে মতিউর রহমান সজিব নামে ওই শিবির কর্মীর লাশ
উত্তোলন করা হয়। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী
জেনারেল হাসাপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত সজীব একই এলাকার মৃত আব্দুল রহমানের
ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষার্থী ছিলেন এবং শিবিরের
রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
জানা যায়, মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের
আদেশের পর মঙ্গলবার দুপুরের দিকে পারিবারিক কবরস্থান থেকে সজীবের মরদেহ
তোলা হয়। ওই সময় কবরে একটি বুলেট পাওয়া যায়। এ সময় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা
সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাবেল উদ্দিন ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা
উপপরিদর্শক (এসআই) মঈনুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
লাশ উত্তোলনের সময় উপস্থিত ছিলেন-
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. হাবেল উদ্দিন,
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম,
হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) এসআই মঈনুল হোসেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা
জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন, পৌরসভা আমীর মাওলানা
মোশাররফ হোসাইন, সেক্রেটারী মাওলানা হেলাল উদ্দিন ও নিহতের স্বজনেরা।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
(ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, আদালতের নির্দেশে কবর থেকে মরদেহ
উত্তোলন করা হয়। ওই সময় কবর থেকে বুলেট সাদৃশ্য একটি বস্তু উদ্ধার করা হয়।
পরীক্ষার পর বলা যাবে এটি বুলেট কিনা।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে ১৪ ডিসেম্বর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভায় জামায়াত-শিবিরের চার নেতাকর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় নিহত জামায়াতকর্মী সাইফুল ইসলামের বড় ভাই মো. আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলার জন্য আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়।
পরে গত ২৬ সেপ্টেম্বর কোম্পানীগঞ্জ থানা ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল কাদের মির্জা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল, সাবেক ইউএনও নুরুজ্জামান, তৎকালীন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম ও ১৯ পুলিশ সদস্য সহ ১১২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা রেকর্ড করে।
এরই প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্তের জন্য আদালত ওই চারজনের লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে নিহত শিবিরকর্মী সজিবের লাশ উত্তোলন করা হয়। গুলিতে নিহত অপর তিন জামায়াত-শিবির কর্মী সাইফুল ইসলাম, আবদুল আজিজ রায়হান ও সাইফুল ইসলাম বাবলুর লাশ পর্যায়ক্রমে কবর থেকে উত্তোলন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মামলার বাদী মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, আমি এবং আমার ভাই সাইফুল ইসলাম জামায়াতের সক্রিয় কর্মী। আমরা ঘটনার সময় দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করি। এতে কাদের মির্জার নেতৃত্বে তার সহযোগী ও প্রশাসনের গুলিতে আমার ভাইসহ চারজন ঘটনাস্থলে মারা যান। ঘটনার পর আমরা এ হতয়ার বিচার চাইলেও আসামিদের প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো বিচার পাইনি। এমনকি গত ১১ বছর ভুক্তভোগী নিহতদের পরিবারের লোকজন বাড়িঘরে থাকতে পারেনি। বর্তমানে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর স্বাধীন বাংলাদেশে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাবেল উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশে শিবিরকর্মী মতিউর রহমান সজিবের লাশ উত্তোলন করা হয়। কবরের মাটির মধ্যে হাড়ের সাথে একটি গুলিও পাওয়া যায়। ক্রমান্বয়ে অন্যদের মরদেহ উত্তোলন করা হবে।
কেকে/ এএম