বিদ্রোহীরা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর মঙ্গলবার (১০ডিসেম্বর) মোহাম্মদ আল-বাশিরকে অন্তর্বর্তী সরকারের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। একইদিন সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
আল জাজিরার খবর অনুসারে, সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে মোহাম্মদ আল-বশির ২০২৫ সালের ১ মার্চ পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করবেন।
মোহাম্মদ আল-বশির একজন সিরিয়ান প্রকৌশলী ও রাজনীতিবিদ। ইতোপূর্বে সিরিয়ার বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়া দল ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ সংশ্লিষ্ট ‘সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্ট’ (এসএসজি)-এর নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। এই সরকার উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার কিছু অংশ এবং ইদলিবে সীমাবদ্ধ ছিল।
মোহাম্মদ আল-বশির ১৯৮৩ সালে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। প্রকৌশল, আইন এবং ইসলামি আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ইংরেজি ভাষায় তিনি বেশ পারদর্শী। ২০১০ সালে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি উন্নত ইংরেজি কোর্স সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনে তিনি সিরিয়ান গ্যাস কোম্পানিতে কাজ করেছেন, যা তার অভিজ্ঞতাকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। সেখানে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন তিনি।
পরে ২০২১ সালে সেই চাকরি ছেড়ে ইদলিবে বিদ্রোহীদের দলে যোগ দেন তিনি। ২০২২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি এসএসজি-র মানবিক ও উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইদলিব প্রশাসনের শুরা কাউন্সিল বশিরকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে। এর মধ্য দিয়ে তিনি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব অঞ্চলে নেতৃত্বের শীর্ষস্থানে পৌঁছান।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, সিরিয়ার নতুন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-বশিরের রাজনৈতিক পরিচিতি ইদলিব প্রদেশের বাইরে তেমন একটা পাওয়া যায়নি। স্বৈরশাসক আসাদের শাসনামলে দেশটির দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রত্যন্ত ওই রাজ্যের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাতে। সেখানকার বিদ্রোহীদের গঠিত সালভেশন গভর্নমেন্টের প্রশাসন পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে আল-বশিরের।
মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল-বশির চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সিরিয়ান সালভেশন গভর্নমেন্টের প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৮৬ সালে ইদলিবের জাবাল যাওইয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সালভেশন গভর্নমেন্টের প্রকাশিত জীবনবৃত্তান্তে লেখা হয়েছে, দেশটির অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-বশির আলেপ্পো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
গত জানুয়ারিতে সিরিয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম লেভান্ত টোয়েন্টি ফোরের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করা এবং ইদলিবের বাস্তুচ্যুত মানুষের মানবিক চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আধুনিক সরকার গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করেন তিনি।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দামেস্কের শাসনের বিরোধিতা করে ইদলিব প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নেয় বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। পরে সব গোষ্ঠীকে এক করে ইদলিবের নিয়ন্ত্রণ নেয় হায়াত তাহরির আল-শাম।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া সংক্ষিপ্ত ভাষণে মোহাম্মাদ আল-বশির বলেছেন, ‘তিনি আগামী ১ মার্চ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষের নেতৃত্ব দেবেন।’
কেকে/এআর