বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫,
২৬ পৌষ ১৪৩১
বাংলা English

বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: শমী কায়সারের ব্যাংকের সবধরনের হিসাব তলব      যানজটের কারণে জনগণের কাছে বিএনপির দুঃখ প্রকাশ      লেবাননের নতুন প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন      ডিএমপির ১২ ডিসিকে বদলি      ভারতীয় জেলেদের সাথে দুর্ব্যবহারের তথ্য ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়      অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব জাতীয় নির্বাচন: সাইফুল হক      বিদ্যুৎ না থাকলেও মিটারে বেশি বিল আসার কারণ জানাল বিএন্ডটি      
গ্রামবাংলা
শরীরে তাজা গুলি নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ রনি
আব্দুল্লাহ আল মামুন রনী, বোয়ালমারী(ফরিদপুর)
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:২২ এএম  (ভিজিটর : ৫৬)
ছবি: প্রতিনিধি

ছবি: প্রতিনিধি

শরীরে তাজা গুলি নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ মো. রনি (৩০)। চুড়ান্ত বিজয়ের মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন।

সেই থেকে শরীরে তাজা বুলেটের প্রচণ্ড যন্ত্রণায় বিনিদ্র রাত কাটে তার। গুলিবিদ্ধ হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ফিরে এলেও প্রচণ্ড যন্ত্রণা আর অনিশ্চিত বেঁচে থাকার শঙ্কা নিয়ে মানবেতর দিন পার করছেন রনি। একদিকে ঋণের বোঝা, সংসারের অভাব-অনটন, দুধের শিশুর খাবার জোগান আর ভবিষ্যত চিকিৎসার দুশ্চিন্তা, পেরেশানি কাতর করে তুলেছে তাকে। গুলিবিদ্ধের চার মাস অতিবাহিত হলেও এখনও মেলেনি সরকারি কোনো সহায়তা, খোঁজ নেয়নি সরকারের কোনো দফতর।

রনি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের দৈত্যরকাঠি গ্রামের এনামুল হোসেনের ছেলে। এক সন্তানের জনক মো. রনি রাজধানীর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কনস্ট্রাকশন সাইড দেখাশোনা করতেন।

৫ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে হেলিকপ্টার থেকে ছুঁড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন। অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের ভারি গুলিটি তার মুখগহ্বর ছেদ করে মেরুদণ্ডের হাড়ের ডিস্কের মধ্যে বিদ্ধ হয়। এতে তার ঠোঁট, সামনের ৮টি দাঁত, জিহ্বা, মুখগহ্বরসহ মেরুদণ্ডের হাড়ের ডিস্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টানা তিন মাস বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এখন বাড়িতে অবস্থান করছেন তিনি।

আন্দোলনের শুরু থেকেই প্রকল্পটি বন্ধ থাকায় ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের সাথে একাত্ম প্রকাশ করে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলো সে। প্রতিদিনের মতো ৫ আগস্ট সকাল বেলা ছাত্র-জনতার সাথে বিক্ষোভরত অবস্থায় রাস্তায় ছিলেন তিনি। এ সময় বিক্ষোভরত ছাত্র-জনতার উপর আকাশ থেকে হেলিকপ্টারে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারায় রনি। আন্দোলনকারী অন্যান্য ছাত্ররা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গুলশান-২ এর ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে মীরপুরের পুর্ব মনিপুর থেকে ছুটে আসেন রনির পিতা এনামুল হোসেন। তিনিও অপর একটি কনস্ট্রাকশন সাইডে কাজ করতেন। ইউনাইটেড হাসপাতালেই প্রাথমিক চিকিৎসা চলে রনি'র। সেখানে বেলা সাড়ে তিনটা থেকে রাত অবধি জটিল অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করতে ব্যর্থ হন চিকিৎসকগণ। অস্ত্রোপচারসহ যাবতীয় চিকিৎসা খরচ বহন করতে হয় পরিবারের। ব্যয়-বহুল ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা করার সামর্থ্য না থাকায়  রাতেই সেখান থেকে ধানমন্ডির পপুলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছেলেকে স্থানান্তর করে পিতা এনামুল হোসেন। পপুলারে ১৮ দিন চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে  চিকিৎসা সেবা নেওয়ায় প্রায় ১২ লক্ষ টাকা ব্যয় মিটাতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।  এ সময় এক সমন্বয়কের মাধ্যমে শুধু মাত্র ঔষধের বিল পরিশোধ করে ছাড় পান তারা।

পপুলার হাসপাতালের ঔষধের বিল ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা পরিশোধ করতে আত্মীয়-স্বজন, গ্রামবাসী ও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার থেকে ঋণ নিতে হয় রনির পরিবারকে। পরে সমন্বয়কদের মাধ্যমে সাভার সিআরপি হাসপাতাল ও ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সর্বশেষ সিআরপিতে কয়েক ঘন্টা ও ইবনে সিনায় ২ মাস ৭ দিন ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলে রনির।

বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে প্রায় সাড়ে তিন মাসের চিকিৎসায় প্রাণে বেঁচে গেলেও শরীরের বাম অংশ বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে প্রায় প্যারালাইসড হয়ে পড়া শরীর নিয়ে কিছুটা হাঁটা চলা করতে পারলেও শরীরে বয়ে বেড়ানো তাজা বুলেটের যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারেন না তিনি। ঘুমতে পারেন না পরিবারের অন্য সদস্যরাও। দিনরাত তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে কাটাতে হচ্ছে রনিকে। সব সময় কাউকে না কাউকে তার পাশে থাকতে হয়। তাই, তার মা, স্ত্রী ও বোন পালাক্রমে পাশে থাকে তার।

পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়,  ঢাকা থাকতে সমন্বয়করা তার বিস্তারিত তথ্য নিলেও এ পর্যন্ত সরকারি কোনো প্রকার সহযোগিতা পায়নি সে। শুধু মাত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে তার চিকিৎসার বাবদ কিছু আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ ও জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সদস্য চৌধুরী এনামুল খোঁজ খবর নিলেও আর কোনো দল বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের কেউ কোনো খোঁজ খবর নেয়নি তার।

তারা আরো জানান- রনি'র বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতিতে মেরুদণ্ডের হাড়ের মধ্যে গেঁথে থাকা গুলি অস্ত্রোপচার করে বের করা ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। এ জন্য আরও সময় লাগবে। তবে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে হয়ত অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা সম্ভব। কিন্তু একদিকে ধারদেনা, ঋণের বোঝা অন্য দিকে পরিবারের উপার্জনক্ষম বাপ-বেটা সম্পুর্ন বেকার। বর্তমানে অভাবের সংসারে দু'বেলা দুমুঠো খাবার জোগান দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে রনির পরিবারের।

২০২১ সালের নভেম্বর মাসে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ঢলনগর-হরিনারায়ণপুর গ্রামে শান্তা ইসলামের সাথে বিয়ে হয় রনি'র। তাদের সংসারে ফাহাদ ইসলাম নামে ১ বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। দুই ভাইবোন, স্ত্রী সন্তান ও মা-বাবার ছয় সদস্যের সংসারে উপার্জনক্ষম ছিলেন রনি ও তার পিতা এনামুল হোসেন।

রনি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এ হাসপাতাল ও হাসপাতাল করে বেড়ানোর জন্য দুজনেরই আয়ের পথ বন্ধ রয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে বর্তমানে বাড়িতে অবস্থান করছেন রনি। পরিবারে আয়ের এখন কোনো উৎস নেই। আত্মীয়-স্বজন ও বাড়ির লোকজনের সহায়তায় আপাতত চলছে তাদের সংসার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথের পরেই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা সেবাসহ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিলেও তাদের কাছে পৌঁছেনি কোনো সহযোগিতা। এমনকি এ পর্যন্ত সরকারের কোনো দপ্তর বা দায়িত্বশীল কেউ খোঁজ খবর নেয়নি।

রনির পিতা এনামুল হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, আন্দোলনের শেষ দিন আমার সন্তান গুলিবিদ্ধ হয়। ঢাকায় থাকতে সমন্বয়করা এসেছে, নাম ঠিকানা নিয়েছে, প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভালো চিকিৎসাসহ আর্থিক সহায়তার। ছেলের পিছনে ঋণ করে, গ্রামের মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা তুলে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ করেছি। এখন আমি নিঃস্ব রিক্ত। জানিনা আমার ছেলেটার চিকিৎসা শেষ করতে পারবো কিনা।

আহত রনির মা নাজমা বেগম বলেন, চার মাস ঘুমাতে পারি না। রাত পোহালেই এনজিওর কিস্তি, ১ বছরের  নাতির দুধ কেনা, দুবেলা দুমুঠো ভাত জুটবে কিনা এ চিন্তায় থাকি। গ্রামের মানুষ ভাবে আমরা সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি অথচ রাতে খাবো সে চাল ঘরে নাই।

আহত রনির স্ত্রী শান্তা ইসলাম বলেন, আমার স্বামী আজ চার মাস গুলিবিদ্ধ, শরীরে তাজা গুলির যন্ত্রণা নিয়ে সারাক্ষণ ছটফট করে। রাতে ঘুমাতে পারেনা। স্ত্রী হয়ে এ যন্ত্রণা সহ্য করতে পারিনা। সরকারের নিকট দাবি জানাই, সরকার যেন তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। যাতে সে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পায়।

জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সদস্য মো. এনামুল চৌধুরী বলেন, একমাস আগে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে আসে মো. রনি আমি তার তথ্য পাঠিয়েছি। এখনও সে কোনো প্রকার সহায়তা পায় নাই।

দৈত্যরকাঠি গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন- আমরা গ্রামবাসী তার চিকিৎসার জন্য কিছু অর্থ সংগ্রহ করে দিয়েছি, বর্তমানে তারা খুবই অর্থ সংকটে দিনযাপন করছে।

এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভির হাসান চৌধুরী জানান- আহত রনির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কেউ আমাকে কিছু বলেনি। তার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুব দ্রুতই যতটুকু সম্ভব সহোযোগীতা করবো।  

এলাকাবাসীর দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সে আহত হয়েছে সরকার যেন দ্রুত তার চিকিৎসা সেবা সহ তার পরিবার যাতে বেঁচে থাকতে পারে তার একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

কেকে/এমএস
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

শমী কায়সারের ব্যাংকের সবধরনের হিসাব তলব
হাত বাড়ালেই মিলছে বাণিজ্য মেলায় নিত্যপন্য
সিলেটে জুয়েলারি দোকান থেকে আড়াইশ ভরি স্বর্ণ চুরির অভিযোগ
যানজটের কারণে জনগণের কাছে বিএনপির দুঃখ প্রকাশ
লেবাননের নতুন প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন

সর্বাধিক পঠিত

বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর, রক্তাক্ত সেই প্রবাসীকে জরিমানা
গঙ্গাচড়ায় বাংলাদেশ স্কাউটসের ত্রৈ-বার্ষিক কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত
লামায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ২ নেতা গ্রেফতার
মতলব উত্তরে বিএনপি নেতার মৃত্যুতে তানভীর হুদার শোক
তাড়াশ উপজেলা পরিষদ ভবনের ছাদে ইউএনও’র শখের বাগান ‘বিলকুঞ্জ’

গ্রামবাংলা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝