৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ব্যাপকভাবে অবনতি হয়েছে। দুই দেশের সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক পর্যায়ে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। বর্তমানে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ঘি ঢেলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতের গণমাধ্যমের দাবি, সীমান্তে তুর্কি ড্রোন মোতায়েন করেছে বাংলাদেশ। এর জবাবে ভারতও সীমান্তে ড্রোন মোতায়নের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে মোদি সরকার।
এই পরিস্থিতিতে উত্তপ্ত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুরের বাসিন্দারা অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, সম্প্রতি ভারত সীমান্তে অতিরিক্ত বিএসএফ মোতায়েন করে এবং নিরাপত্তা আরো কড়াকড়ি করেছে। গভীর রাতে বিএসএফ ক্যাম্পে ট্রাক ভর্তি ভারী অস্ত্র আনা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে রৌমারী সীমান্তের বড়াইবাড়ি, বারবান্দা ও বন্দুর চরসহ বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে বড়াইবাড়ি সীমান্তবাসী সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত। ওই এলাকার বাসিন্দা লাল মিয়া, আব্দুস সালাম এবং সামেজ উদ্দিন জানিয়েছেন, আগে বিএসএফ সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে তারা স্বাভাবিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতেন, কিন্তু এখন তাদের আচরণ সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে।
তারা আরও জানান, গভীর রাতে বিএসএফ ক্যাম্পে ট্রাক ভর্তি ভারী অস্ত্রশস্ত্র প্রবেশ করতে দেখা যায়। সেই ট্রাকগুলো রাতেই ক্যাম্পে থেকে যায় এবং পরদিন সকালে সেগুলো ক্যাম্প ছেড়ে চলে যায়। এই পরিস্থিতিতে গত দুই রাত ধরে তারা বিজিবির সঙ্গে মিলে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন। বিজিবি তাদের সর্বদা সতর্ক অবস্থায় থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
একই এলাকার আবুল কাশেম ও আমজাদ আলী বলেন, ২০০১ সালে সিলেটের পাদুয়া এলাকায় বিএসএফের একটি চৌকি নির্মাণের চেষ্টা বিডিআর সদস্যরা প্রতিহত করেছিল। পরে বিএসএফ বড়াইবাড়ি দখলের চেষ্টা চালায়। কিন্তু মাত্র ৭ জন বিডিআর সদস্যের প্রতিরোধে বিএসএফের বিশাল বাহিনী পরাজিত হয়। সেই ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিএসএফ এখনো মরিয়া হতে পারে বলে তাদের ধারণা।
তারা আরো মনে করেন, ২০০৯ সালের পিলখানা ট্রাজেডির মাধ্যমে হয়তো ভারত সেই প্রতিশোধ নিয়েছে। তারপরও বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
স্থানীয়রা আরো জানান, দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের সম্পর্ক অবনতির ফলে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাতে তারা ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। অনেকেই বিজিবির সঙ্গে মিলে পাহারা দিচ্ছেন। তাদের দাবি, সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করা হোক।
বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত রাখতে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে দফায় দফায় পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে সীমান্তবাসীর আতঙ্ক কমছে না।
কেকে/এমএস