শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে করতোয়া নদীতে আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। দিনভর জলকেলি, খুনসুটি সেই সঙ্গে কিচির-মিচির শব্দ, কখনো নীল আকাশে ঝাঁক বেঁধে নান্দনিক কসরতে ডানা মেলে পাখিরা। যা দেখতে নদীপাড়ে ভিড় করছেন পাখি প্রেমীরা। অগণিত পাখির কিচির-মিচির শব্দে ঘুম ভাঙছে সেখানকার মানুষের।
জানা যায়, প্রতিবছর শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ গ্রামে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীতে অতিথি পাখি আসতে শুরু করে। সাধারণত শীতে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে পাখিরা এই নদীতে আসে। এরমধ্যে পরিযায়ী সরালি, বালি হাঁস, দেশীয় পানকৌরী ও সাদা বক রয়েছে।
সরজমিনে দেখা যায়, কিছু পাখি ঝাঁক বেধে আপন মনে সাঁতার কাটছে। কিছু কচুরিপানা পাতায় আপন মনে বিশ্রাম নিচ্ছে। কিছু আবার আকাশে উড়ছে। আবার পরক্ষণেই ঝাঁপ দিচ্ছে জলে। পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর চারদিক। সবুজ গাছপালা আর দিনভর নদীর জলে পাখিদের ভেসে বেড়ানো ও জলকেলি খেলা চলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যা হলে পাখিগুলো আশ্রয় নিচ্ছে ময়না দ্বীপের আশেপাশের গাছে।
সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকে অধিকাংশ হাঁসজাতীয় পাখিরা আসতে শুরু করে। তবে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পাখি দেখা যায়। সকাল দুপুর বিকেলে পাখির ওড়াউড়ি আর জলকেলিতে মুগ্ধ হন বেড়াতে আসা পর্যটকরা। অনেকেই ছবি তোলেন, আবার কেউ পাখির ওড়া-উড়ির দৃশ্য ভিডিও ধারণ করেন।
নওগাঁ গ্রামের বাসিন্দা প্রদিপ কর্মকার বলেন, করতোয়া নদীতে সব থেকে সুন্দর দিক হলো শীতকালে অতিথি পাখির আগমন। এই অতিথি পাখিকে দর্শনার্থীর সংখ্যা আগের থেকে বেড়ে গেছে। আশপাশের মানুষ অতিথি পাখি দেখতে আসে, এতে আমাদেরও ভালো লাগে। আমাদের উচিত এই সৌন্দর্য ধরে রাখা। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনেরও উচিত অতিথি পাখি সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
তাড়াশ ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক মেহেরুল ইসলাম বাদল বলেন, কেউ যেন পাখি শিকার না করে, তাদের ঢিল ছুড়ে না মারে এবং তাদের বিরক্ত না করে। সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। অতিথি পাখি শীতকালের সৌন্দর্য, যার উপস্থিতিতে প্রকৃতিতে আসে নতুন রূপ। নির্দিষ্ট সময়ের পর এই পাখিগুলো চলে যায়। অতিথি পাখি আমাদের ক্ষতি করে না। অথচ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পাখি শিকার করা হয়। জীবন বাঁচাতে এসে জীবন দিতে হয় ভিনদেশি পাখিদের। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য পাখির বিচরণক্ষেত্র মুক্তভাবে রক্ষা করতে হবে।
কেকে/এমআই