নন গভার্নমেন্ট টিচার্স রেজিষ্ট্রেশন এন্ড সার্টিফিকেশন অথোরিটির (এন্টিআরসিএ) নিয়োগ পদ্ধতিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেন 'নিবন্ধিত (১-১২তম) নিয়োগ প্রত্যাশী শিক্ষক পরিষদ'। দুর্নীতির কারণে নিয়োগ থেকে বঞ্চিতদের নিয়োগ প্রদানের দাবি করে তারা।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৫ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এই দাবি পেশ করে।
এসময় এন্টিআরসিএ নিবন্ধিত (১-১২তম ) নিয়োগ প্রত্যাশী শিক্ষক পরিষদের আহবায়ক জিএম ইয়াছিন লিখিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠ করেন।
লিখিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, নিয়োগ দেওয়ার নামে আকাশচুম্বী দূর্নীতি ও এক বিরল প্রতিষ্ঠান আছে, যার নাম NTRCA (NON-GOVERNMENT TEACHERS' REGISTRATION & CERTIFICATION AUTHORITY) যাকে আমরা বলে থাকি NON TRUSTED, RESEARCH AND CORRUPTED AUTHORITY. অর্থাৎ অবিশ্বাসী, দূর্নীতিগ্রস্থ গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান।
কারণ এ পর্যন্ত ৫টি গণবিজ্ঞপ্তিতে যেভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার কোনো নিয়োগের সময় এনটিআরসিএ বৈধ সনদ ধারী দের কাছে তার স্বচ্ছতা সুনিশ্চিত করতে পারে নাই। বরং উল্টো আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক দুইজন মন্ত্রী ডা. দিপু মনি ও ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল এর যোগসাজশে দুর্নীতির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল।
এসময় তিনি এনটিআরসিএর দুর্নীতির কিছু উদাহরণ তুলে ধরে বলেন,
১. একজনের সনদ অন্য জনে ব্যবহার করে চাকরি করছেন।
২. প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে এনটিআরসিএ ৬০ হাজারের বেশি জাল সনদ ধারী নিয়োগ দিয়েছে। আমাদের হিসেবে এই সংখ্যা কয়েকগুণ হবে।
৩. আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল স্যার সংসদে বলেছেন ৯৯ হাজার বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এ বছর। অথচ ৩১ মার্চ, ২০২৪ ইং তারিখে যে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সুপারিশ করছে তাতে ১৯৫৮৬ জন শিক্ষক সুপারিশ পেয়েছে, যাদের প্রায় ৭ হাজার শিক্ষক মাধ্যমিক পর্যায় থেকে কলেজ পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বাকী ৭৮/৭৯হাজার শিক্ষক গোপনে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন এটা স্পষ্ট।
৪. কখনও ৩৫ এর বেশি বয়সের কাউকে চাকরি দিবে না বলা হলেও ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ১ম-৫ম ব্যাচের ৪৪০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের কারোরই বয়স ৩৫ এর নীচ হবে না। অথচ আমরা যখন পাস করেছি তখন কারোরই বয়স ৩০ বছর হয়নি। এমনকি ১২/৬/২০১৮ ইং তারিখের আগে যারা পাস করেছি সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী তাদের বয়স আজীবন বলবৎ থাকবে।
৫. ৩য় গনবিজ্ঞপ্তিতে ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে যে মিথ্যাচার করা হয়েছে, সেখানে মাত্র ১০/১২ হাজার বেকার নিবন্ধন সনদ ধারী নিয়োগ পেয়েছে। বাকী সবাই ইনডেক্সধারী, প্রকারন্তরে শিক্ষক নিয়োগের নামে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বদলী বানিজ্য করেছে।
৬. লক্ষাধিক পদ খালি আছে, শুধু সদিচ্ছার অভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে বৈধ সনদ ধারী দের নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা করেই চলছে। যা বর্তমান বৈষম্য দূরীকরণ এর সাথে সাংঘর্ষিক চিন্তা ধারার বহিঃপ্রকাশ।
দুর্নীতির অভিযোগ গুলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো অনিয়ম, দূর্নীতির একটা ছোট্ট তালিকামাত্র। আমরা আমাদের বঞ্চিত নিবন্ধন সনদধারী নিয়োগের অধিকার ফিরিয়ে পেতে চাই। এই লক্ষ্যে আমরা বলতে চাই, সকল দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি এবং অনৈতিকভাবে যে সকল বৈষম্য সৃষ্টি করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে সকল বৈষম্য দূরীভূত করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ১ম-১২তম বৈধ নিবন্ধন সনদ ধারীদের অবিলম্বে নিয়োগের সুনিশ্চিত ঘোষণা দিতে হবে।
তিনি বলেন, দাবি না মানলে আগামী ২২ ডিসেম্বর অনির্দিষ্টকালের জন্য এনটিআরসিএ'র সকল কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে এনটিআরসিএ নিয়োগের সুনিশ্চিত ঘোষণা না করা পর্যন্ত বোরাক টাওয়ার এর সামনে ইস্কাটন গার্ডেন রোডে আমাদের আইনগত অধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
কেকে/এএম