টানা সরকারী বন্ধে পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠেছে পার্বত্য জেলা বান্দরবান। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধের সঙ্গে যোগ হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের এর ছুটি। আর এই তিনদিনের সরকারী বন্ধের ফলে দীর্ঘদিন পর বান্দরবানের হোটেল-মোটেল আর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া পযর্টক এর সমাগম হয়েছে।
শীতের আমেজ আর সেই সাথে টানা তিনদিনের বন্ধে পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠেছে পার্বত্য জেলা বান্দরবান। জেলার মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরিসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো এখন পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রেই ছুটছে অসংখ্য পর্যটক আর পাহাড়,নদী ঝর্ণার অপরুপ রুপ দেখে বিমোহিত হচ্ছে প্রকৃতি প্রেমীরা।
ঢাকা থেকে বান্দরবান বেড়াতে আসা পর্যটক মো. তাহের জানান, ১৬ই ডিসেম্বরসহ কয়েকদিনের টানা বন্ধ পেয়ে বান্দরবান ভ্রমনে এসেছি। বান্দরবানের নদী, পাহাড়, প্রকৃতির অপরুপ রুপ দেখে আমরা বিমোহিত হয়েছি।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের অনেকস্থানে ভ্রমন করেছি তবে একসাথে পাহাড়, নদী, মেঘ আর প্রকৃতির এত আয়োজন শুধু বান্দরবানেই উপভোগ করেছি।
সিলেট থেকে বান্দরবানের নীলাচল পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমনে আসা পর্যটক মো. রাজ জানান, দেশের বাইরে অনেক দেশে ভ্রমনের সুযোগ হয়েছে তবে বান্দরবান আমাকে বার বার কাছে ডাকে। বান্দরবান যতবারই ভ্রমন করি ততই ভালো লাগে। যেকোন ছুটি পেলেই আমি পরিবার পরিজন নিয়ে বান্দরবান ছুটে আসি।
এদিকে দীর্ঘদিন পর টানা সরকারী বন্ধে পর্যটকদের আগমনে জেলার হোটেল-মোটেল, রিসোর্টগুলো ভর্তি হয়ে ওঠেছে কানায় কানায় , আর তাদের সেবা দিতে পেরে খুশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবানের আবাসিক হোটেল হিলভিউ এর ম্যানেজার মো. পারভেজ জানান, ১৬ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে বান্দরবানে প্রচুর পর্যটক এর সমাগম হয়েছে আর আমাদের হোটেলের প্রায় ৮০শতাংশ বুকিং হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পুরো ডিসেম্বর মাসেই আশাকরি বান্দরবানে প্রচুর পর্যটক ভ্রমনে আসবে এবং তারা বান্দরবান ভ্রমনে নতুন অভিজ্ঞতার সঞ্চয় করবে।
বান্দরবানের আবাসিক হোটেল গার্ডেন সিটির স্বতাধিকারী মো. জাফর জানান, ১৩ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের হোটেলের বেশীরভাগ রুম বুকিং হচ্ছে আর সেই সাথে থার্টিফাস্ট নাইট উপলক্ষ্যে ও আমাদের হোটেলে প্রচুর পর্যটক এর আগমনের সাড়া পাচ্ছি, দীর্ঘদিন পর বান্দরবানে পর্যটক এর আগমনে আমরা খুশি আর পর্যটকদের সেবা দিতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি।
বান্দরবান হোটেল রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অর্থ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাশ বাপ্পা জানান, বান্দরবানে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং ভ্রমনের জন্য বান্দরবান হোটেল রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে এবং প্রতিটি হোটেল-মোটলে ও রির্সোট এর মালিকদের পর্যটকদের সর্বোত্তম সেবা দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বান্দরবানে জীপ-মাইক্রো-কার মালিক সমবায় সমিতির লাইন পরিচালক মো. কামাল জানান, বান্দরবানে পর্যটকদের সেবার জন্য প্রায় ৪৫০টি চাঁদের গাড়ি, জিপ ও মাইক্রোবাস রয়েছে, আর এই গাড়ীগুলোর চালকরা একজন দক্ষ গাইড হিসেবে পর্যটকদের সেবা দিয়ে থাকে। তিনি আরো জানান, শীতের শুরুতেই বান্দরবানে পর্যটকে মুখরিত হয়ে ওঠছে আর এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে পর্যটকরা বান্দরবান ভ্রমনে স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করবে আর পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।
এদিকে টানা বন্ধে বান্দরবানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে আরো বাড়তি সর্তকতা এমনটাই জানালেন ট্যুরিষ্ট পুলিশ এর কর্মকর্তারা।
ট্যুরিষ্ট পুলিশ,বান্দরবান জোন এর উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহীন মিয়া বলেন, বান্দরবানে সারা বছরই পর্যটকরা ভ্রমনে আসে আর তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পোষাকেও সাদা পোষাকে ট্যুরিষ্ট পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে দায়িত্ব পালন করে। বান্দরবানে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে আর সেখানে পর্যটকরা অনায়াসে ঘুরতে পারে তবে যে কোনস্থানে ভ্রমনের পূর্বে সেস্থানের তথ্য ও বিস্তারিত জেনে ভ্রমন করার পরামর্শ এই কর্মকর্তার।
কেকে/এমএস