মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ‘মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ’ করবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল। ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এই সমাবেশ হবে। এতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিএনপি দলীয় একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর পর প্রথম কোনো সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
শনিবার(১৪ ডিসেম্বর) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন ফিরোজায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও মুক্তিযোদ্ধা দল সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। এ সময় তারা সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে অনুরোধ জানালে তিনি সম্মতি জানিয়েছেন। রাতে ইশতিয়াক আজিজ উলফাত গণমাধ্যমকে জানান, ম্যাডাম বলেছেন, তিনি সুস্থ থাকলে ২১ ডিসেম্বর সমাবেশে অংশ নেবেন।
সূত্র জানায়, ওইদিন খালেদা জিয়া সমাবেশে অংশ নিলে সমাবেশ ২ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করা হবে। খালেদা জিয়া ছাড়াও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন। সারা দেশ থেকে মুক্তিযোদ্ধা দলের শীর্ষ নেতারাও সমাবেশে যোগ দেবেন। এ ব্যাপারে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহমেদ খান যুগান্তরকে বলেন, বিজয় দিবসের ওপর ২১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ হবে। আমরা চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এই সমাবেশ করব। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কথা দিয়েছেন সমাবেশে খালেদা জিয়াকে উপস্থিত রাখবেন।
এদিকে বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান যুগান্তরকে বলেন, শুনেছি ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) মুক্তিযোদ্ধা দলের কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন। ইনশাআল্লাহ তিনি সুস্থ থাকলে সমাবেশে যাবেন।
জানা যায়, প্রতিবছর বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল। বিগত সরকারের আমলে নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও সমাবেশ করে সংগঠনটি। তবে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর এবার মনোরম পরিবেশে সমাবেশ করতে চান নেতারা। এজন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণে সায় মিলেছে বলেও জানান দায়িত্বশীল নেতারা। তারা জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সমাবেশ করার সব প্রস্তুতি চলছে। ২১ ডিসেম্বর বেলা ৩টায় সমাবেশ শুরু হয়ে বিকাল ৫টায় সমাবেশ শেষ হবে। এতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন। এছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটিসহ দলের শীর্ষ নেতারা এদিন উপস্থিত থাকবেন।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এছাড়া জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন ২০১৮ সালে। একই বছর কারাবরণের আগে ৩ ফেব্রুয়ারি হোটেল লা মেরিডিয়ানে নির্বাহী কমিটির সভায় অংশ নেন। ওই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি সিলেট সফর করেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যান। দুই বছর কারাগারে থাকার পর ২০২০ সালের মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পান খালেদা জিয়া। চলতি বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি এক আদেশে তাকে মুক্তি দেন। পরে তিনি আদালতের মাধ্যমে নির্দোষ হিসাবে মুক্তি পান।
এদিকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও খালেদা জিয়াকে দেখা যায়নি। সবশের্ষ চলতি বছরের নভেম্বরে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া এদিন বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় রাস্তায় জড়ো হওয়া বিএনপিকর্মীরা পুরো এলাকা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন। জানা যায়, ৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, কিডনি জটিলতা, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে খালেদা জিয়ার রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়।
এদিকে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদ ও দেশটির গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর প্রতিবাদে ২২ ডিসেম্বর পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। এই সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসাবে অংশ নেবেন। এছাড়াও ১৯ ডিসেম্বর জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় সমাবেশ করবে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এতে অংশ নেবেন।
কেকে/এআর