বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার ব্যাপারে সোচ্চার হলেও নিজ দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে টোটালি ব্যর্থ ভারত সরকার। পরোক্ষভাবে ভারতীয় মুসলিমদের ওপর নির্যাতনে ক্ষমতাসীন মোদি সরকারের ইন্ধন থাকারও অভিযোগ উঠেছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন ভারত নিজের দেশে সংখ্যালঘু মুসলিমদের নির্যাতন করছে আর বাংলাদেশে এসে সনাতন সম্পদ্রায়কে নির্যাতনের ধোঁয়া তুলে অনধিকার চর্চা করছে। তারা মূলত বাংলাদেশে মুসলমান এবং হিন্দুদের মধ্যে একটা সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করে নিজেরা ফায়দা লুটতে চায়। সেই এজেন্ডা বাস্তবায়নে পতিত আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করছে তারা।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেছেন, ‘দেশে সংখ্যালঘু সমস্যা মূলত রাজনৈতিক। তাই সমাধানও হতে হবে রাজনৈতিকভাবেই। আওয়ামী লীগ এখনো বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।’
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব। গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, ‘সংখ্যালঘু নিপীড়নের কাঠগড়ায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুতে প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিক্ষোভ চলছে। অথচ তাদের দেশেই সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাস পেছনে ফেলে বাংলাদেশকে জঙ্গি, মৌলবাদী তকমা জুড়ে দিচ্ছে দেশটি। অথচ বাংলাদেশ হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ছাড়া উল্লেখ করার মতো সে রকম কিছু ঘটেনি।’
সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ভারতে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে সংখ্যালঘু নির্যাতন। মোদি শাসনামলে মুসলিম, খ্রিষ্টান উপসনালয়ে যে হারে আক্রমণ শানানো হচ্ছে তা অগ্রহণযোগ্য। ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিটি গণতন্ত্রের মৌলিক অধিকার। অথচ ভারতে সেই মৌলিক অধিকার পালনে বাধা প্রদান করছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো।’
অ্যাঞ্জেলা মার্কেল নিজের আত্মজীবনী নিয়ে সম্প্রতি একটি বই প্রকাশ করেছেন। বইটির নাম ‘ফ্রিডম : মেমোরিস ১৯৫৪-২০২১’। সেখানে তিনি ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে সংখ্যালঘু অধিকার খর্ব ও তাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনার ওপর আলোকপাত করেছেন। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনে ভারতীয় হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
শুধু অ্যাঞ্জেলার আত্মজীবনী নয়, কাকতালীয়ভাবে জার্মানির সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়াল্টার লিন্ডনারের ভারত সম্পর্কিত আরেকটি বই এদিন প্রকাশিত হয়েছে। আর তাতেও ভারতে মুসলিম, খ্রিষ্টান নিধন যজ্ঞের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। একইভাবে কীভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে দেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে তা তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে।
এদিনের উন্মোচনী অনুষ্ঠানে সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অ্যাঞ্জেলা মার্কেল জানান, ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। তবে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে বেজায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, ভারত ধর্মীয় সহনশীলতার দেশ ছিল, আছে, থাকবে। তাই চরমভাবে বিষয়টি অস্বীকার করে।
অ্যাঞ্জেলা জানান, আমি ভারতীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ওপর একটি রিসার্চ করেছিলাম, যার ফল ভয়াবহ। তাই মোদির কথা বিশ্বাস করিনি আমি। কারণ বাস্তবতা ভিন্ন। আমি বিষয়টি নিয়ে একমত হতে পারিনি। অন্যদিকে মনমোহন সিং প্রসঙ্গে বলেছেন, উনি আমাকে ভারতীয় সংস্কৃতি, ভাষাগত পার্থক্য সম্বন্ধে বিস্তারিত জানিয়েছিলেন। আমাদের উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। এখনো আছে। ওনার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। আর বৈচিত্র্যই ভারতের অন্যতম অস্ত্র এটা উনি আমাকে জানিয়েছিলেন।
শুধু সংখ্যালঘু নয়, অন্য নাগরিকদেরও সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ মোদি সরকার। সম্প্রতি ভারতের আসামে দুর্গা মন্দিরের ভেতরে এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আটজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এখনো কিশোরীর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
কেকে/এমএস