সম্প্রতি ‘১০৬ বছর বয়সেও ভাতা পাননি সহিতন বেওয়া’ শিরোনামে খোলা কাগজ পত্রিকায় ও অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে সেই ভিক্ষুক বিধবা সহিতন বেওয়াকে দেওয়া হয়েছে বয়স্ক ভাতা, নতুন ঘর, ছাগল, চৌকি, লেপ-তোষক সহ অন্যান্য সামগ্রী।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে একটি নতুন ঘর নির্মাণ ও দুটি ছাগলসহ থাকার জন্য চৌকি, লেপ, তোষক ও অন্যান্য সামগ্রী তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু সাঈদ ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সায়েম ইমরান।
সহিতন বেওয়া ধনবাড়ী উপজেলার যদুনাথপুর ইউনিয়নের শ্রী হরিপুর বাড়ই পাড়া গ্রামের মৃত জোয়াদ আলীর স্ত্রী। ২৫-৩০ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই ভিক্ষা করে সংসার চলাতেন তিনি। তিন ছেলে ও দুই মেয়ে থাকলেও তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় কেউ খবর রাখতো না সহিতন বেওয়ার। তাঁর শরীরের এক একটি চিহ্ন যেন বয়ে বেড়াচ্ছে জীবনের সেই দুঃসহ স্মৃতিগুলো, যেখানে কখনোই কেউ পাশে ছিল না। ঘর-সংসারের দায়িত্বগুলো এতদিন তিনি একা একাই বহন করেছেন। তবে, দীর্ঘ সময় ধরে অসহায় জীবন কাটানোর পরও আজও তিনি সরকারের কোনো সাহায্য বা সহায়তা পাননি।
এমন খবর পত্রিকায় ও অনলাইনে প্রকাশের পর সরজমিনে পরিদর্শন করেন উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় যদুনাথপুর ইউনিয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি দ্রুত বিষয়টি নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। প্রথমত তাকে বয়স্ক ভাতা’র কার্ড করে দেন উপজেলা সমাজ সেবা অফিস।
এসময় ধনবাড়ী উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন, ধনবাড়ী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক হাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি সৈয়দ সাজন আহম্মেদ রাজু, সাংবাদিক পলাশ ইসলাম, স্থানীয় প্রযত্ন’র ব্যবস্থাপক ইকবাল হোসেন জুপিটারসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সহিতন বেওয়া কন্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, আমার স্বামী দীর্ঘ বছর আগে মারা যায়। ছেলেরা বিয়ে করে শুশ্বরবাড়ীতে চলে গেছে। আমাকে খাওয়ানোর মতো কোন লোক না থাকায় ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ড সহ বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভিক্ষা করে নিজে চলতাম। অসুস্থতার কারণে আমি আর ভিক্ষা করতে পারছি না। আমি মেম্বার, চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে ঘুরছি কেউ কোন সহযোগীতা করে নাই। বর্তমান ড. ইউনুস সরকার উপজেলা থেকে ঘর সহ অনেক কিছু দিছে আমি ভাবি নাই এত কিছু পাবো। নতুন ঘর পেয়ে অনেক খুশি তাই কান্না চলে আসতেছে। সরকার সহ উপজেলার স্যারদের জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদেরকে আরো ভালো কাজ করার তৌফিক দেন।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন জানান, পত্রিকায় সহিতন বেওয়ার খবরটি দেখতে পেয়ে দ্রুত উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে বয়স্ক ভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ধনবাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সায়েম ইমরান বলেন, বিষয়টি আমি জানার সাথে সাথেই তাৎক্ষণিকভাবে ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে দুই দিনের মধ্যে ঘর নির্মাণ সহ সকল সুধিবা’র ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু সাঈদ জানান, পত্রিকায় ‘১০৬ বছর বয়সেও ভাতা পাননি সহিতন বেওয়া’ শিরোনামে এমন সংবাদ প্রকাশের পর আমরা দ্রুত তাকে সার্বিক সহযোগীতার ব্যবস্থা করেছি। তাকে বয়স্ক ভাতা, ঘর, ছাগল, চৌকি, লেপ তোষক ব্যবস্থা করতে পেরে গর্বিত।
কেকে/এমএস