সাফজয়ী অধিনায়ক আশরাফুল হক আসিফের মা মমতাজ বেগম হলেন সফল জননী।
গত সোমবার ( ৯ ডিসেম্বর) বেগম রোকেয়া দিবসে উপজেলা পর্যায়ে ২০২৪ এর সফল জননী ক্যাটাগরিতে জয়িতার সম্মাননা দেওয়া হয় মমতাজ বেগমকে।
তাকে জয়িতার সম্মাননা পুরস্কার ও সনদ তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার, পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাল হোসাইন ও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ্জহুরা।
মমতাজ বেগমের বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার দত্তপাড়া গ্রামে। সাফজয়ী অধিনায়ক আশরাফুল হক আসিফের বয়স তখন সাড়ে তিন বছর। সে সময় মারা যান বাবা আবু তালেব। তিনি পেশায় ছিলেন সাংবাদিক ও ফুটবলার। বিয়ের ৮ বছর ৮ মাসের মাথায় স্বামীকে হারিয়ে অন্ধকার নেমে এসেছিল মমতাজ বেগমের সংসারে। একদিকে স্বামী হারানোর শোক। অন্যদিকে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে অনেক কষ্টে সন্তানদের লেখাপড়া করান মমতাজ বেগম। বড় ছেলে আরিফুল হক পড়ালেখার পাশাপাশি ময়মনসিংহ জেলা লীগের ফুটবলার ও অধিনায়ক। পাশাপাশি দৈনিক খোলা কাগজের ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক হিসেবে। চলতি বছর ছোট ছেলে আশরাফুল হক আসিফের নেতৃত্বে স্বাগতিক নেপালকে ৪-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশের যুবারা।
আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন। লেখাপড়া করিয়ে বড় মেয়ে তাহমিনা আক্তার হিমিকে উপযুক্ত পাত্রের কাছে বিয়েও দিয়েছেন। স্বামীকে হারিয়ে সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করে দেশসেরা খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তোলার পিছনে মমতাজ বেগমের অবদান অপরিসীম।
সাফজয়ী অধিনায়ক আশরাফুল হক আসিফ জানান, আমাদের তিন ভাই-বোনকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসতে মা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তিনি কষ্ট না করলে আমরা এত দূর আসতে পারতাম না।
মমতাজ বেগম বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর চেয়েছি, সন্তানরা যেন তার বাবার মতো হয়। যেন মানুষের জন্য কাজ করতে পারে। তাই কষ্ট করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছি। স্বামীর স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে ওদের খেলাধুলার দিকে মনোনিবেশ করিয়েছি। বড় ছেলে খেলাধুলার পাশাপাশি সাংবাদিকতাও করছে। আমার সন্তানরা দেশের ও সমাজের কাজে লেগেছে, সেটাই আমার জন্য আনন্দের। তাদের জন্য এমন সম্মান পাব, সেটা তো কখনো ভাবিনি। সফল জননীর সম্মাননা পেয়ে খুবই ভালো লাগছে।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ্জহুরা বলেন, স্বামীকে হারিয়ে সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশের কল্যাণে নিয়োজিত করায় মমতাজ বেগমকে সফল জননীর সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বলেন, বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে স্বামীকে হারিয়ে তিন সন্তানকে নিয়ে মমতাজ বেগমকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। তার সন্তানরা এখন দেশসেরা খেলোয়াড়। সত্যিই তিনি একজন আদর্শ মায়ের অনুপ্রেরণা। মমতাজ বেগমকে সেরা জননী নির্বাচিত করতে পেরে উপজেলা প্রশাসন এবং আমিও গর্ব বোধ করছি।
কেকে/এইচএস