জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সোচ্চার ও সচেতন শিক্ষার্থীদের উদ্দ্যেগে 'জুলাই অভ্যুত্থান'- ও এর চেতনাকে রক্ষা ও প্রতিষ্ঠার জন্য সংবাদ সম্মেলন করে 'গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন' নামে নতুন একটি সংশোধনী ঘোষণা করেছে জুলাই আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন কেন্দ্রে (টিএসসি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেয়া হয়। একইসাথে নতুন এই প্রচেষ্টাটিকে সংগঠিত করতে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতুকে আহবায়ক করা হয়েছে। অন্যান্য সদস্যরা হলেন, ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহমিদা ফাইজা সদস্য সচিব, ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমরান শাহরিয়ার মুখপাত্র এবং যুগ্ম আহবায়ক ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রুদ্র মোহাম্মদ সফিউল্লাহ।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ, আহত এবং অঙ্গ বিসর্জনকারিদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম দুর্গ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অভ্যুত্থানের পর এ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা যে পরিবর্তন দেখতে চেয়েছিল তা হচ্ছেনা। যে সকল দাবি ও সংস্কার গুলোতে শিক্ষার্থীদের ঐক্যমত্য তৈরি হয়েছে, সেগুলোতেও প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়েও ফ্যাসিবাদ উৎখাত ও গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা প্রতিষ্ঠা করার কাজে গাফলিত পরিলক্ষিত হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, ‘রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের কাঙ্খিত দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে পুরো জাতির বুকে জাগ্রত হয়েছিল একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন, যে নতুন বাংলাদেশে কোন ফ্যাসিবাদী শক্তি থাকবেনা, যে বাংলাদেশে বৈষম্য ও নিপীড়ন থাকবেনা, যে বাংলাদেশে ন্যায় বিচারের নিশ্চয়তা থাকবে, যে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবীকার নিরাপত্তা থাকবে এবং যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হবে নিরাপদ ও উচ্চ শিক্ষার জন্য যথপোযুক্ত। এ স্বপ্নকে সামনে রেখেই আপামর জনতা নব গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেয়। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, যে চেতনাকে লালন করে মানুষ এ সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল, সে চেতনা এ সরকার লালন করতে পারছেনা।
বর্তমান সরকারের নিজেরও সদিচ্ছার অভাব ও গাফলতি এ সংকটটিকে আরো বৃদ্ধি করেছে বলে দাবি করে ‘গণ অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন’ এর সদস্যরা আরও বলেন, এ সংকট সরকারের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় অংশীজন কর্তৃক সৃষ্ট। সরকারের অভ্যন্তরে ফ্যাসিবাদে দোসর ও সরকারের বাইরে ফ্যাসিবাদপন্থী শক্তি সরকারকে এই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে সমুন্নত করতে বাধা প্রদান করছে। ফ্যাসিবাদী শক্তি পুনর্বাসিত হচ্ছে, নতুন বাংলাদেশে জন-মানুষের জীবন ও জীবীকার নিরাপত্তা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। যে সংস্কারগুলো আমরা আশা করছিলাম সেসব সাংবিধানিক-প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলোতে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দিচ্ছে, এমনকি রক্তার্জিত এই গণ-অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তারা বলেন, আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করব একই সাথে তার লাগামও টেনে ধরব। আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনে আবার রক্ত ঝরাবো এবং এ পরিবর্তনের বাধাদানকারী সকল শক্তিকে প্রতিহত করব।
কেকে/এমআই