বিগত মে মাসের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া বিএনপি নেতা হাসান আলীকে জেলা কৃষক দলের আহবায়ক করার ক্ষোভে ফুঁসছেন নাটোরের পদ বঞ্চিত বিএনপি নেতাকর্মীরা। দলের নেতাকর্মীরা এমন সিন্ধান্তে অসেন্তাষ প্রকাশ করে কমিটি প্রত্যাহার করার দাবী জানিয়েছেন।
বিএনপি নেতা হাসান আলী ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম মাসুমের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চান। রিয়াজুল ইসলাম মাসুম ছিলেন নাটোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সদর আসনের সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের ঘনিষ্ট সহযোগী।
হাসান আলীকে কৃষক দলের আহবায়ক করার পরেই আওয়ামী লীগ নেতার নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে তার মাইকে বক্তব্য দিয়ে ভোট চাওয়ার সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।
জেলা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাবেক আহবায়ক মফিজ উদ্দিন অভিযোগ করেন, গত বুধবার (১১ ডিসেম্বর) জেলা কৃষক দলের কমিটি ঘোষণা করে হাসান আলীকে জেলা কৃষক দলের আহবায়ক ঘোষনা করা হয়। হাসান আলী আওয়ামী লীগ আমলের পুরো সময় দলে নিষ্কৃয় ছিলেন। এমনকি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলামের পক্ষে ভোট করেন।
নিজেকে দলের নিবেদিত ও ত্যাগী নেতা দাবি করে মফিজ উদ্দিন আরো বলেন, তিনি দীর্ঘদিন নাটোর জেলা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির থানা পর্যায়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। দুই দফায় নাটোর নবাব সিরাজ উদ দৌলা সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদে নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে প্রো-ভিপি সহ অন্য পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। এটা বিএনপি'কে নেতৃত্ব শূন্য করা অপচেষ্টা বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, কতিপয় নেতা আছেন যারা নাটোরের বিএনপির অভিভাবক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তার অবর্তমানে এবং অগোচরে এগুলো করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর সদর উপজেলা কৃষক দলের সাবেক সভাপতি বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলা উদ্দিন বলেন, বর্তমান জেলা কমিটিতে যাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে হাসান আলী আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে ছিলেন। এটা দেখে আমরা মর্মাহত হয়েছি,ফলে দলীয় নেতা কর্মীদের মাঝেও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। আমরা আশা রাখি দলীয় হাইকমান্ড বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখে সিদ্ধান্ত নিবেন। দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত আমরা মাথা পেতে নেব।
জেলা কৃষক দলের সাবেক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রাজ বলেন, নতুন কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। আমরা মামলা হামলার শিকার হয়েছি অথচ নেতৃস্থানীয় জায়গায় বসানো হলো আওয়ামী লীগের দোসরকে। তিনি আওয়ামী লীগের নেতার ভোট চেয়েছেন এগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তারেক রহমান সাহেব বলেছেন কোন ধরনের আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা ছিল এরকম কাউকে পদে আনা যাবে না। অথচ তারা এমন একজন ব্যক্তিকে জেলা কমিটির আহ্বায়ক বানালো যার দলের জন্য ত্যাগ নেই, আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সঙ্গে সবসময় চলাফেরা ছিল। আমরা অবিলম্বে এই কমিটির বাতিলের দাবী জানাই।
জেলা কৃষক দলের নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক হাসান আলী বলেন, রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের একটি প্রতিপক্ষ থাকে। সেই প্রতিপক্ষই রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি পরিস্থিতির শিকার হয়ে প্রতিবেশীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিপক্ষের লোকজন ভিডিওটা সম্পূর্ণটা না দিয়ে শুধু আমার বক্তব্যের অংশটুকু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, যাকে কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে তার ভাইরাল ভিডিওটি আমিও দেখেছি। সে বলছে যে, আঞ্চলিকতার খাতিরে সে ওইখানে গিয়েছিল, সেখানে না গেলে লোকজন বিপথগামী হতো। তবে সে ওইখানে গিয়ে বলেছে, সে বিএনপি করে।
কেকে/এআর