পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে অবৈধ ঘুষ লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ ওঠেছে সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি শহরে আলিশান ফ্ল্যাট, গ্রামে বিপুল পরিমাণ ফসলি জমিসহ অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার হাবিবুল্লাহ নগর গ্রামের মৃত আবু বক্কার সিদ্দিকের ছেলে মনিরুল ইসলাম। পিতা ছিলেন, সাধারণ কৃষক। সামন্য জমিতে চাষবাদ করে কোন রকম সংসার চলতো আবু বক্কার সিদ্দিক। দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা মনিরুল ইসলাম লেখাপড়া শেষ করে ১৯৯৯ সালে সিরাজগঞ্জে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে (সিও) পদে চাকরী শুরু করেন। পরে চাকরী করা অবস্থায় স্থানীয় বিভিন্ন মহলের প্রভাবশালীদের সাথে মনিরুল ইসলামের সখ্যতা শুরু হয়। পরে ২০২২ সালের (৮ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসকের (সিএ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চাকরীর পাশাপাশি পতিত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পান (২৩ আগষ্ট) ২০২৩ সালে। সেই থেকে মনিরুল ইসলাম প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। এ থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। স্থানীয় সরকার বিভাগের যোগদানের পর থেকে গড়ে তুলেছেন নিজের মত সিন্ডিকেট। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছে মতো দুর্নীতি করে চলেছেন মনিরুল ইসলাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সরকার বিভাগের কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন মনিরুল ইসলাম। কয়েক বছর আগে, শহরের ব্রাইট হেলথ হাসপাতালের (৭ম তলায়) ২ হাজার স্কয়ার ফিডের একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। যার মুল্য ৫০ লাখ টাকা। শুধু শহরেই না স্ত্রী ও সন্তানের নামেও করেছেন সম্পদের পাহাড়। তার জন্মভুমিতে কয়েক বিঘা ফসলি জমিও ক্রয় করেছেন। এই দুর্নীতিবাজের ভয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মচারীরা সব সময় ভয়ে থাকে। উনার সিন্ডিকেট ভেঙ্গে যাবে, একারনে টাকা দিয়ে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন এই মনিরুল ইসলাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক (ইউপি) সচিব বলেন, জেলার ইউনিয়ন পরিষদের সকল প্রকল্পের কাজের বিল ও হাট বাজার ইজারায় প্রশাসনিক কর্মকর্তার চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে তিনি বিল পাশ করতেন না। এই অবৈধ অর্থে তিনি শহরে ক্রয় করেছেন আলিশান ফ্ল্যাট ও তার নিজ গ্রামের বাড়িতেও কয়েক বিঘা ফসলি জমি ক্রয় করেছেন। এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য দুদকের নজরের জোড় দাবি জানাচ্ছি।
সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, সোনালী ব্যাংক কোর্ট ভবণ শাখা থেকে ১৩ লাখ টাকা ও আত্মীয়স্বজদের কাছ থেকে কিছু টাকা হাওলাদ নিয়ে এই ফ্ল্যাট কিনেছি। আমি কোন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নাই।
সরকারী চাকরী নীতিমালা অনুযায়ী ৩ এর ১৭ ধারা মোতাবেক ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার উর্দ্ধে সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, এই ফ্ল্যাট কেনার বিষয়ে উর্ধবতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) গণপতি রায় বলেন, আমি নতুন এসেছি। তবে সরকারী চাকরী আচারণ নীতিমালার বাইরে কেউ ব্যক্তিগত ভাবে সম্পদ অর্জন করলে তার দায়-দায়িত্ব তার উপরেই বর্তাবে।
কেকে/এআর