৭৫ বছর বয়সী মন্টু দাস জীবনসংগ্রামে নুয়ে পড়েছেন। অভাব-অনটনে স্ত্রী রাধা রানী দাসকে নিয়ে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের মোড়হাট গ্রামের ঋষি পাড়ায় পলিথিন ও পাটখড়ি দিয়ে তৈরি একটি ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করেন। পুরোনো পলিথিনে তৈরি এই ঘর বৃষ্টিতে ভিজে যায়। এতদিনেও তাঁদের ভাগ্যে জোটেনি একটি সরকারি ঘর।
মন্টু দাস ওই গ্রামের মৃত সদানন্দ দাসের ছেলে। তাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। মেয়ে-জামাইরা আলাদা সংসার গড়েছেন। একমাত্র ছেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পৃথকভাবে বসবাস করেন। পৈতৃক জমির মাত্র পৌনে তিন শতক জায়গার ওপর এই দম্পতির বসবাস। কোনো অতিরিক্ত জমি নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের লাঠি ভর করে মন্টু দাস ধীর পায়ে ঝুঁপড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন। তাঁর পরনে পুরোনো লুঙ্গি আর ছেঁড়া পাঞ্জাবি। এ সময় তাঁর স্ত্রীও পাশে এসে দাঁড়ায়। কোনোমতে দাঁড়িয়ে কথা বললেন তিনি।
মন্টু দাস বলেন, বাবা, বাবা এহে-নে আর পারি না কামাই করতে। ৬০ বছর ধইরা বাঁশ ও বেত দিয়ে হরেক রকমের মাল বানাইয়া হাটে-গ্রামে বেচে সংসার চালাইছি। ছওয়াল-মাইয়াদের বড় কইরা বিয়া দিছি। ছওয়ালটা বউ-বাচ্চা নিয়া আলাদা থাহে। ও সেলুনের কাজ করে যা কামাই করে তাতে ওগো সংসার চলে কোনোমতে। আমাগো দেখবো ক্যামনে! তারপরেও খেয়াল রাহে।
তিনি বলেন, আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি। কোনো রোজগার করতে পারি না। টাহা-পয়সা নাই। পেট চলে না, ঘর দিবো ক্যামনে। তাই পলিথিন ও পাটখড়ি দিয়ে ঘর বানিয়ে থাহি।
সরকারি ঘর না পাওয়ার আক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, হুনছি গরিবগো নাকি সরকার ঘর দেয়। আমাগো লাইগা যদি একটা ঘর হইতো, শেষ বয়সে একটু শান্তিতে থাকতে পারতাম।
গট্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাভলু জানান, মন্টু দাসকে অনেক আগে এক বান্ডেল ঢেউ টিন দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে ঘর তৈরি সম্ভব হয়নি। সরকারি কোনো ঘর বরাদ্দ এলে তার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এছাড়া, তার স্ত্রীর নামে একটি শিশু কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, এ ধরনের অসহায় মানুষদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা উচিত। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেন তাদের তালিকায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
কেকে/এএম