লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে দুপুরের খাবার না পেয়ে বিক্ষোভ করেছেন রোগীর স্বজন ও স্থানীয়রা। এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্ষুধার্ত রোগীরা।
বৃহস্পতিবার(১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিকাল ৩টায় স্থানীয়দের তোপের মুখে তড়িঘড়ি করে খারার সংগ্রহ করে রোগীদের মাঝে বিতরণ করেন ঠিকাদারের লোকজন।
বিক্ষুব্ধ রোগীর স্বজনরা জানান, লালমনিরহাট সদর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে বহিঃবিভাগ ও আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে ভর্তিকৃত রোগীরা সরকারী ভাবে বিনামুল্যে সকালে নাস্তা, দুপুর ও রাতে খাবার পেয়ে থাকেন। রোগীদের খাবার পরিবেশনের জন্য পথ্যের ঠিকাদার নিয়োগ করেন কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদের কাছ থেকে খাবার বুঝে নেয়ার দায়িত্বে থাকেন ডায়েট ক্লার্ক ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার।
দুপুরের খাবার ১২ টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে পরিবেশন করার নিয়ম থাকলেও এ হাসপাতালে মানা হয় না কোন নিয়ম নীতি। ঠিকাদার তার ইচ্ছেমত সময় ও পরিমানে খাবার বিতরন করেন। পথ্যের অনিয়ম দীর্ঘ দিনের হলেও নিরব কর্তৃপক্ষ। খাবারের মান খুব খারাপ। অনেক রোগী এসব খাবার খেতে না পেরে বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে খায়। আবার অনেক সময় রোগীরা খাবারই পায় না। যতগুলো রোগী ভর্তি থাকেন, তাদের প্রত্যেককে খাবার দেওয়ার নিয়ম থাকলেও অনেক সময় রোগীরা খাবার পায় না বলে রোগীদের অভিযোগ।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার সময় খাবার দেওয়ার কথা থাকলেও খাবার দেওয়া হয় বিকাল ৩টায়। যার মধ্যে বেশ কিছু রোগী খাবার পাননি। খাবার শেষ বলে জানালে যেসব রোগী খাবার পাননি তাদের স্বজনরা হাসপাতাল চত্ত্বরে খাবারের জন্য বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় ঠিকাদারের লোকজন তরিঘরি করে বাহিরে থেকে খাবার কিনে এনে রোগীদের মাঝে পরিবেশন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। একই দিন অনেক ভর্তি রোগী সকালের নাস্তাও পায়ননি বলে রোগীদের অভিযোগ।
রোগী আমেনা বেওয়ার স্বজন জয়নুদ্দিন জেহাদি বলেন, খাবার কয়েকজন রোগীকে দেয়ার পরে বলে যে খাবার শেষ। শুধু কি তাই টাকা ছাড়া হাসপাতালে বেড পাওয়া যায় না। একশত টাকা ঘুস দিয়েও শতবর্ষি রোগীর জন্য একটা বেড মেলাতে পারি নি। হাসতালের নোংরা পরিবেশে বসে খাবার খাওয়া যায় না। চারিদিকে শুধু দূর্গন্ধ ছড়িয়ে থাকে। হাতপালের টয়লেটের অবস্থা খুবই খারাপ। সব সময় ময়লা পানি জমে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী দাবি করেন, বৃহস্পতিবার ১৯১ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। কিন্তু খাবার দেয়া হয়েছে মাত্র ৮০/১০০ জনকে। বাকীরা খাবার পাননি। নতুন ঠিকাদারের সাথে পথ্যে দায়িত্বরতদের গোপন আতাঁত থাকায় রোগীর সংখ্যা অনুযায়ী খাবার বুঝে নেন না তারা। যার কারনে রোগীদের খাবার সংকট দেখা দেয়।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের বাবুর্চি ফিরোজ আহমেদ বলেন, আজ ঠিকাদার বাজার করে দিতে বিলম্ব করায় রান্নার কাজ করতে দেরি হয়েছে। ফলে রোগীদের খাবার দিতে বিলম্ব হয়েছে।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সামিনা খাতুন বলেন, হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ১১০ জন ভর্তি রোগীর মধ্যে ৮৪জন রোগীর দুপুরের খাবার সময় মতো বুঝিয়ে পাই। বাকী রোগীদের খাবার বিকাল ৩টার দিকে ঠিকাদারের লোকজন এসে দিয়ে দিয়ে যায়। কেন রোগীদের খাবার পরিবেশনে বিলম্ব হলো তা তদন্ত করে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেকে/এমএস