মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দুই নৌ-ডাকাত গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় ২৫ মামলার আসামি ডাকাত সর্দার বাবলা নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আরও তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ঘটনার পর পৃথক স্থান থেকে আটক করা হয়েছে ডাকাত দলের ৯ সদস্যকে।
নিহত ডাকাত সর্দার বাবলা ওরফে উজ্জ্বল খালাসী (৪২) চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের বাচ্চু খালাসীর ছেলে বলে জানা গেছে।
গুলিবিদ্ধরা হলেন লিটন মিজি (৩৬), রহিম বাদশা (৫০), আক্তার হোসেন(৪০)।
সরেজমিনে ঘুরে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে আটটার দিকে ইমামপুর ইউনিয়নের মল্লিকের চর গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে দুটি স্পিডবোট এবং দুটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে ২৫/৩০জন সহযোগী নিয়ে মহড়া দিচ্ছিলেন ডাকাত সর্দার বাবলা। কিছুক্ষণ পর নদী ছেড়ে নদী তীরবর্তী মল্লিকের চর গ্রামে রহিম বাদশার বাড়িতে চলে আসেন তারা। কিছুক্ষণ পর রহিম বাদশার বাড়ি থেকে গোলাগুলি শব্দ শুনতে পান তারা। দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র গোলাগুলির ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গোলাগুলির পর কিছু লোককে দৌড়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়।
এ ঘটনার কিছু সময় পরে রহিম বাদশার বাড়িতে গিয়ে দেখেন দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বাবলার লাশ পড়ে আছে এবং পাশের অন্য একটি কক্ষে ডাকাত দলের ৪ সদস্যকে আটকে রাখা হয়েছে। বাবলার মরদেহের পাশ থেকে বেশ কয়েকটি গুলির খোসা ও নগদ ২০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় গজারিয়া ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রাম থেকে ৫ ডাকাত সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানায়, মেঘনা নদীর ষোলআনী এলাকায় একটি বৈধ বালুমহাল থাকলেও নদীর মল্লিকের চর ও গুয়াগাছি এলাকায় রাতের আঁধারে অবৈধ দুটি বালুমহাল চলতো। নৌ-ডাকাত বাবলার ছত্রছায়ায় মল্লিকের চরের বালুমহালটি পরিচালনা করতে বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন মেম্বার ও রহিম বাদশা। অন্যদিকে নদীর গুয়াগাছিয়া এলাকার বালুমহালটি পরিচালনা করতো আরেক নৌ-ডাকাত নয়ন বাহিনীর প্রধান নয়ন। দুই বাহিনীর লোকজন আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিয়মিত নদীতে মহড়া দিত।
এই ঘটনায় নিহত ডাকাত সর্দার বাবলার স্ত্রী আফিয়া আক্তার বলেন, আমার স্বামীর প্রতিপক্ষ ছিল নৌ-ডাকাত নয়ন বাহিনীর লোকজন। আমাদের লোকজনের মাধ্যমে খবর নিয়ে যতটুকু জানতে পেরেছি নৌ-ডাকাত নয়ন ও তার লোকজন স্পিডবোট নিয়ে এসে গোলাগুলি করেছে। বাবলাকে গুলি করে হত্যা করার পর তারা দ্রুত স্পিডবোট দিয়ে পালিয়ে যায়।
বিষয়টি সম্পর্কে নয়ন বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড পিয়াস বলেন, এই ঘটনার সাথে কিছু লোক আমাদের জড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কোনভাবেই আমরা জড়িত নই। ঘটনার সময় আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। শুনেছি স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দিয়ে তাকে মেরে ফেলেছে।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, কিছুক্ষণ আগে আমরা এরকম একটি খবর পেয়েছি। খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে বিষয়টি অন্তঃকোন্দল নাকি দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
উল্লেখ্য, মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলার সীমান্তবর্তী পদ্মা ও মেঘনা নদীর মোহনা দিয়ে চলাচলকারী নৌযান চালকদের কাছে আতঙ্কের নাম নৌ-ডাকাত বাবলা বাহিনী। প্রশাসনের নাকের ডগায় বিভিন্ন নৌযানে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলো তারা। বাহিনী প্রধান বাবলা ডাকাত ওরফে উজ্জ্বল খালাসীর নামে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে একাধিক থানায় ২৫টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
কেকে/এমআই