পুলিশ বাহিনীকে জাগিয়ে তোলাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেট মেট্রোপলিটন হেডকোয়ার্টার্সের কনফারেন্স হলে সিলেট বিভাগের সকল ইউনিটের কর্মরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
বাহারুল আলম বলেন, বর্তমানে পুলিশ মনভাঙা অবস্থায় আছে; ভয়ে আতঙ্কে তাদের মন ভেঙে গেছে। গণঅভ্যুত্থানে সিনিয়র পুলিশ সদ্যরা জুনিয়রদের হুকুম দিয়ে তাদেরকে অনিরাপদ রেখে পালিয়ে গেছে। পুলিশ ফোর্সকে জাগিয়ে তোলা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, বিগত সমযে পুলিশ দলীয় স্বার্থ উদ্ধারে বড় ধরনের অপরাধ করেছে, এ জন্য আমরা লজ্জিত। বিপ্লব পরবর্তী সময়ে পুলিশের কর্মস্পৃহা ফিরিয়ে আনাও আরেকটি চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবে পরিবর্তিত পরিবেশে মামলার ক্ষেত্রে অসাধু ব্যক্তিরা সুবিধা নিয়েছে। নিরীহ যাদের আসামী করা হয়েছে তাদের গ্রেফতার করা হবে না। হয়রানি এড়াতে খোঁজ নিয়ে তাদের পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হবে।
গত ১৯ জুলাই পুলিশের গুলিতে সাংবাদিক তুরাব নিহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তুরাব হত্যা মামলায় পুলিশ কমিশনার গুরুত্ব সহকারে কাজ করে যাবেন। তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালনে আমাদেরই গুলিতে মারা গেছেন। তাকে তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। আমাদের ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কোনো সুযোগ নেই। এ সময় তুরাব হত্যাকান্ডের বিচার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারকে অনুরোধ করেন আইজিপি।
গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, হুমকি ও চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে কেউ চাঁদা চাইতে এলে কাউকে চাঁদা দিবেন না, ভয়ও পাবেন না। আমরা সকল সময়ই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আছি। ব্যবসায়ীরা যাতে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে সেই পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিককালে মব জাস্টিসের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, এখন আসামিকে আদালতে তোলা হলেই উৎসুক জনতার ভিড়ে কিছু স্বার্থান্বেষী লোক তাদের উপর হামলা করছেন। এসময় আসামীকে বাঁচাতে গিয়ে পুলিশও আহত হচ্ছেন। এই বিষয়ে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। যে অপরাধ করবে বিজ্ঞ আদালত তার বিচারের ব্যবস্থা করবেন।
পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা কমিশনে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় সুপারিশ করেছি। বিশেষ করে বেশিরভাগ পুলিশ সদস্যকে ওভারটাইম কাজ করতে হচ্ছে। এটার জন্য তারা কোনো ভাতা পান না। এই বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি তাদের কর্মস্পৃহা ফিরিয়ে আনতে আমরা তাদের সমস্যা সমাধাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
মতবিনিময় সভায় র্যাবের অতিরিক্ত আইজিপি একেএম শহিদুর রহমান, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমান, সিলেটের পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিমসহ পুলিশের সকল দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কেকে/এমআই