শীতের সকালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিস্তৃত সরিষা ক্ষেতে সূর্যের আলো পড়তেই হলুদ গালিচার মতো ঝলমল করতে শুরু করে। প্রজাপতির ঝাঁক আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত সরিষার মাঠ যেন প্রকৃতির এক অনন্য রূপকল্প। কৃষকদের মুখে ফুটে উঠেছে সোনালি রঙের হাসি, আর সরিষার ভালো ফলন ও বাজারদর তাদের জীবনে এনে দিয়েছে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা।
ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ফুলবাড়ীর মাঠে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ এক অপরূপ দৃশ্য। উপজেলার প্রতিটি গ্রামে সরিষা আবাদ বাড়ছে, এবং চরের জমি থেকে উঁচু জমি পর্যন্ত সরিষার আবাদে এক নীরব বিপ্লব ঘটছে। কৃষকরা আধুনিক জাতের সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন, এবং এর সুফল তাদের জীবনে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু আলম জানান, বারি-১৪, ১৭ এবং বিনা ৪, ৯ জাতের সরিষায় তেলের পরিমাণ বেশি হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে এই জাতের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।
ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানালেন, এবছর ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। কৃষকদের জন্য সরিষার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২৩০০ জন কৃষককে সার ও বীজের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে এবং নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। তাদের বিশ্বাস, এ বছর সরিষার উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে এবং কৃষকরা এর থেকে আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোরো ধান কাটার পর এবং পরবর্তী ফসলের আগে ফাঁকা সময়ে সরিষা চাষ করা যায়। এটি অল্প সময়ের মধ্যে ভালো ফলন দেয়, এবং সরিষার ফুল থেকে 'বড়া' ও পাতা থেকে শাক রান্না করা হয়। সরিষার গাছ জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত হয়, আর বাজারে এর ভালো চাহিদা থাকায় প্রতি মণে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত দাম পাওয়া যাচ্ছে।
সরিষার হলুদ গালিচা শুধু কৃষকদের জীবন বদলাচ্ছে না, বরং এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও বাড়িয়ে তুলছে। সরিষা খেতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই বাড়ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড়। বিশেষ করে বড়ভিটা ইউনিয়নের হলুদ খেতগুলিতে কিশোর কিশোরীদের সেলফি তোলা ও ঘোরাঘুরির ধুম লেগেছে।
কেকে/এএম