সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক খোলা কাগজে সংবাদ প্রকাশের পর হারানো বাকপ্রতিবন্ধী সন্তানকে ফিরে পেল বাবা-মা।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) খুলনার চুকনগর বাসষ্টান্ডে উপজেলা শ্রমিক দলের সিনিয়র সহ- সভাপতি গাজী ফারুক হোসেনের মাধ্যমে বাকপ্রতিবন্ধী যুবককে তার বাবা-মায়ের কাছে ফেরত দেওয়া হয়।
১ মাস আগে হারিয়ে যায় বাকপ্রতিবন্ধী আনোয়ার হোসেন (২৮)।নামে যুবককে অনেক খোঁজখুঁজির পরও কোথা তার সন্ধান না পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন তার পরিবার। পরে ১ মাস আগে হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে ফিরে পেয়ে আনন্দিত পরিবারটি।
টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার ফুলমালীরচালা তেবাদিয়া পাড়ার বাসিন্দা মো. লতিফ হোসেন ও আনারজান বিবির তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে বাকপ্রতিবন্ধী আনোয়ার হোসেন, সে দীর্ঘ এক মাস আগে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। সন্তান ফিরে আসবে এই ভেবে পথের দিকে চেয়ে থাকতেন বাবা-মা। আদরের বড় সন্তানকে হারিয়ে বাবা-মা পাগল প্রায়। ছেলের শোকে কাঁদতে কাঁদতে চোখে যেন ছানি পড়ে গেছে তাদের। হঠাৎ করেই অবসান হলো দীর্ঘদিনের অপেক্ষার। নিখোঁজের পর জাতীয় দৈনিক খোলা কাগজের সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ায় বাকপ্রতিবন্ধী ছেলেটি ফিরে পায় আপন ঠিকানা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দির্ঘ ১ মাস আগে বাকপ্রতিবন্ধী মো. আনোয়ার হোসেন বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। চারদিকে খোঁজাখুঁজি, হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়েও তার খোঁজ মেলেনি। কোথাও খোঁজ না পেয়ে তারা হতভম্ব হয়ে পড়েছিলো। পরবর্তীতে চলতি মাসের ১৫ ডিসেম্বর রবিবার ‘জাহাঙ্গীর আলম মুকুল’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘বাকপ্রতিবন্ধী কিশোর ফিরতে চায় মা- বাবার কাছে’ উক্ত শিরোনামে জাতীয় দৈনিক খোলা কাগজের অনলাইনে একটি সংবাদ প্রকাশ হলে বাকপ্রতিবন্ধী আনোয়ার হোসেনের ছবি দেখে চিনতে পারে তার পরিবারের সদস্যরা।
আনোয়ার হোসেনের পরিবারের সদস্যরা ১৮ ডিসেম্বর বুধবারে যোগাযোগ করে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরের আশ্রয়দাতা ফল ব্যাবসায়ী আজিজুর রহমান ও ডুমুরিয়া উপজেলা শ্রমিক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি গাজী ফারুক হোসেনের সাথে।
পরবর্তীতে ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধায় হাজির চুকনগর বাসষ্টান্ডে আজিজুর রহমানের ফলের দোকানে ছেলেকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তার বাবা লতিফ হোসেন। অন্যদিকে সন্তানের মতো লালন-পালনকারী আজিজুর রহমানের চোখে জল। এতদিন যাকে সন্তান স্নেহে আদর যত্ন করেছিলেন, সে চলে যাবে। কিছুতেই মনকে শান্ত করতে পারছিলেন না তিনি।
আজিজুর রহমান জানান, তার মন খারাপ হলেও আনোয়ার হোসেন তার প্রকৃত বাবা-মাকে ফিরে পেয়েছে এতেই তিনি খুশি হয়েছেন। নিজের সন্তান না হলেও সে আমার সন্তানতুল্য। এটা আমার জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ থাকবে। ওর জন্য আরো কিছু যদি করতে হয়, আমি করব।
তিনি আরো জানান, নিখোঁজ আনোয়ার হোসেনকে গত এক মাস আগে ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর বাসষ্টান্ড এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বাকপ্রতিবন্ধী ছেলেটির পরিবারের সন্ধান চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বাকপ্রতিবন্ধী এই ছেলেটিকে সেবা যত্ন করে আসছি।
বাকপ্রতিবন্ধী আনোয়ার হোসেনের বাবা লতিফ হোসেন বলেন, আজ নিজের হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। যে কষ্ট এতদিন বুকে বিঁধে ছিল তা দূর হয়েছে।
তিনি লালন-পালনকারী আজিজুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, উনি আমাদের চিরদিনের মতো আত্মার আত্মীয় হয়ে গেলেন।
কেকে/এমএস