সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের আশায় বাংলাদেশ থেকে জীবিকার সন্ধানে পৃথিবীর উন্নত দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন বহু মানুষ। এসব মানুষের অনেকেই মানব পাচারকারী দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে হচ্ছেন সর্বস্বান্ত ও নিঃস্ব।
এমনই ঘটনা ঘটেছে বাহার উদ্দিনের ছেলে মো. মিজান মিয়া(২৫) এর সঙ্গে। এ ঘটনায় সাহাব উদ্দিন(৪০) ও তার স্ত্রী রূপা আক্তার(২২) নামে চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার গ্রেফতার হওয়া দুজনকে দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। মানব পাচার চক্রের সদস্য সাহাব উদ্দিনের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রামে। সে ওই গ্রামের বোরহান মাতব্বরের ছেলে। এর আগে গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) বাহার উদ্দিন বাদী হয়ে মানব পাচার চক্রের সদস্য সাহাব উদ্দিন ও তার স্ত্রী রূপা আক্তারসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪-৫ জনকে আসামি করে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
‘আমার সব শেষ অইয়্যা গেছে, আমি নিঃস্ব অইয়্যা গেছি। জমিজমা-বাড়িঘর বেইচ্ছা(বিক্রি করে) ও ধারদেনা কইরা পোলারে (ছেলেকে) বিদেশ পাঠাইছিলাম। দালালে আমার সোনার সংসার তছনছ করে দিছে।’
মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে এভাবেই কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মো. বাহার উদ্দিন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের ভাটিচর নওপাড়া গ্রামে।
ভুক্তভোগী বাহার উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা জানান, ‘তাদের ছেলে মিজান মিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ সৌদি আরবে থাকার সুবাদে সেখানে সাহাব উদ্দিনের অজ্ঞাতনামা এক শ্যালকের সাথে পরিচয় হয়। পরে ওই শ্যালক সৌদি আরব থেকে লিবিয়া চলে যায়। লিবিয়া থাকা অজ্ঞাত ওই শ্যালক এক পর্যায়ে সখত্যা গড়ে তোলে মিজানের সাথে। একপর্যায়ে লিবিয়া প্রবাসী শ্যালক তার এক ভগ্নিপতির মাধ্যমে মিজানকে ২ লাখ টাকা বেতনের চাকুরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবটি সরল মনে বিশ্বাস করে রাজি হয় মিজান ও তার পরিবার।
পরে গত ছয় মাস আগে সৌদি আরব থেকে লিবিয়ায় যেতে দেশে আসে মিজান। এ বিষয়ে মিজানের সাথে যোগাযোগ ও লেনদেন করতো সাহাব উদ্দিন। দেশে আসার তিন মাস পর অজ্ঞাত শ্যালক ও সাহাব উদ্দিনের কথামতো কয়েকটি ব্যাংক একাউন্ট ,বিকাশ ও বিভিন্নভাবে দফায় দফায় সর্বমোট ১২ লক্ষ টাকা প্রদান করলে মিজান মিয়াকে একটি পাসপোর্ট প্রদান করে এবং তাকে লিবিয়া নিয়ে যায়। সেখানে মিজানের ওরপ শুরু হয় অমানসিক নির্যাতন।
মিজানের পরিবারের লোকজন আরো জানায়, লিবিয়ায় নির্যাতনের এক পর্যায়ে গ্রেফতার সাহাব উদ্দিন মিজানকে লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠাতে আরো ১৬ লক্ষ টাকা দিতে বলে। তখন ভোক্তভোগী পরিবার জমি, বাড়িঘর ও গরু বিক্রি করে ১৬ লক্ষ টাকা দেয়। মোট ২৮ লাখ দিলেও সাহাব উদ্দিন দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় মিজানের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যায়। কিছুদিন পর সাহাব উদ্দিন মোবাইলে আরো ২০ লাখ টাকা দাবি করে। পরে আত্নীয় স্বজন ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করে বাহার উদ্দিন গত শুক্রবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মিজানের চিন্তায় চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছেন পরিবারের সদস্যরা।
এ প্রসঙ্গে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে মানব পাচার আইনে আমরা মামলা রুজু পূর্বক মানবপাচার চক্রের অত্র মামলার ঘটনার সাথে জড়িত দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছি। মামলার ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে এবং ভোক্তভোগীকে উদ্ধারের জন্য ১০ (দশ) দিনের রিমান্ড চেয়ে আসামিদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। চক্রের বাকী সদস্যদের গ্রেফতারে এবং ভোক্তভোগীকে উদ্ধারের জন্য তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
কেকে/এজে