দেশের শ্রম আইন অনুযায়ী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা নিষিদ্ধ। কিন্তু চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বেশিরভাগ ইটভাটায় এই আইন উপেক্ষা করে শিশুদের কাজে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আর্থিক সংকট ও দারিদ্র্যের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের দিয়ে মাটি বহন, কয়লা পরিবহন, ইট তৈরি, পোড়ানো ও শুকানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো হচ্ছে। ফলে শ্রম আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সরেজমিনে মতলব উত্তরের মেসার্স সরকার ব্রিকসক, মেসার্স মতিন মনোয়ার ব্রিকসকসহ কয়েকটি ইটভাটায় দেখা যায়, ৭ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুরা বড়দের মতো কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। কেউ মা-বাবার সঙ্গে, কেউ আবার দালালের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে। এসব শিশুদের কাজ করতে দেখা গেছে কাঁচা ইট শুকানো, চুল্লিতে ইট পোড়ানো, মাটি ও কয়লা বহন এবং ভ্যানে ইট পরিবহন করার মতো শ্রমসাধ্য কাজে।
দারিদ্র্যপীড়িত এসব শিশুরা আর্থিক সংকট মেটাতে বাধ্য হয়ে কাজ করছে। অনেক শিশুই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। ইটভাটার মালিকরা সস্তায় শ্রম পাওয়ার জন্য শিশুদের কাজে নিয়োগ দিচ্ছেন। পূর্ণবয়স্ক শ্রমিকদের তুলনায় শিশু শ্রমিকদের পারিশ্রমিক কম হওয়ায় মালিকরা তাদের প্রতি বেশি ঝুঁকছেন।
মতলব উত্তর উপজেলায় বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ১২টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ভাটায় শিশুশ্রমিক নিয়োগ করা হচ্ছে। সরেজমিনে মেসার্স সরকার ব্রিকসক এবং মেসার্স মতিন মনোয়ার ব্রিকসকে গিয়ে শিশুদের কঠোর পরিশ্রম করতে দেখা গেছে।
রংপুর, সাতক্ষীরা, খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দালালের মাধ্যমে শিশুরা এখানে আসে। ছয় মাসের চুক্তিতে তারা কাজ করে, যার জন্য ২০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. হাসিবুল ইসলাম জানান, দীর্ঘসময় ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলার মধ্যে কাজ করার ফলে শিশুদের ত্বক, নখ এবং শ্বাসতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা রক্তস্বল্পতা, হাঁপানি, এজমা, ব্রঙ্কাইটিসসহ গুরুতর রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
১০ বছর বয়সী মাঈনুলের গল্প এই দুঃখজনক পরিস্থিতির বাস্তব উদাহরণ। ছয় বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে মাকে সাহায্য করতে মাঈনুল রংপুর থেকে এসেছে মতলবে। মাত্র ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে সে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করছে। মাঈনুলের মতো আরও শিশুরা, যেমন রহমান, পিন্টু, আব্দুল কুদ্দুস, এবং নয়ন, প্রতিনিয়ত তাদের শৈশব বিসর্জন দিচ্ছে।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একি মিত্র চাকমা বলেছেন, বিধি লঙ্ঘন করে কোনো ইটভাটায় শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে স্থানীয় শ্রম অধিদপ্তর ও প্রশাসনের পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবের কারণে মালিকরা এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
কেকে/এএম