নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে নানা সংকটের মুখে পড়েছে, যার ফলে প্রায় ৮ লাখ বাসিন্দা পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গর্ভবতী মা, শিশু, নবজাতক, এবং গৃহবধূদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার জন্য থাকা বিশেষজ্ঞ কর্মীর সংখ্যা অত্যন্ত কম, এবং একাধিক ইউনিয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য। পাশাপাশি, এই বিভাগের অধিকাংশ কেন্দ্রে পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় উপকরণও নেই। এতে স্বাস্থ্য সেবা একদিকে যেমন সঙ্কুচিত হচ্ছে, অন্যদিকে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।
রূপগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে ২টি পৌরসভা এবং ৭টি ইউনিয়নের স্থায়ী ও অস্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তবে, এসব অঞ্চলে প্রায়ই দেখা যায়, নিয়মানুযায়ী প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ও পৌর কার্যালয়ে এসএসিএমও, এফডব্লিউভি, ফার্মাসিস্ট, এমএলএসএস, এবং ভিসিটরের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মী থাকা উচিত, যারা ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা সেবা প্রদান নিশ্চিত করবেন। কিন্তু বাস্তবে এসব পদগুলোর অধিকাংশ শূন্য, এবং যারা আছেন, তাদের অনেকেই নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন না।
এফডব্লিউভি শিরিনা, যিনি দাউদপুর ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে কাজ করেন, জানিয়েছেন, তিনি একাই দায়িত্ব পালন করছেন এবং সেখানে কোনো সহকর্মী নেই।
শিরিনা আরও জানান, তিনি হাসপাতালেই থাকেন এবং রোগীদের সেবা দেন, তবে দাপ্তরিক সময়ে সেখানে অফিস করার মতো সুযোগ নেই।
এছাড়া, মুড়াপাড়া ইউনিয়নের এফপিআই আওলাদ হোসেন জানান, তাদের নিজস্ব ভবন নেই এবং তারা পুরোনো গোডাউনকে কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন। এফপিআই আল আমিন কায়েতপাড়া ইউনিয়নেও একই পরিস্থিতির কথা জানান, সেখানে কার্যালয় রয়েছে তবে জমি বেদখল হয়ে গেছে এবং লোকবলও যথেষ্ট নয়।
রূপগঞ্জ উপজেলায় বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে নিজস্ব কার্যালয় নেই, যার ফলে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা কঠিন হয়ে পড়ছে। কাচ্চন পৌরসভা, যেখানে পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় আছে, সেটি বর্তমানে নোংরা এবং মাদকাসক্তদের আড্ডা হয়ে উঠেছে। এফডব্লিউভি সুমাইয়া রানী একাই কার্যালয়টি চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে তার কাজের সময়কালও অনিয়মিত।
আরেকটি উদাহরণ হলো গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন, যেখানে একাধিক পদ শূন্য রয়েছে এবং সেবাদানকারীরা শুধুমাত্র ৪টি শূন্য পদে সহায়তা করছে। তবে, তারাবো পৌরসভা একটি আশার আলো, যেখানে লোকবল কম হলেও সেবা কার্যক্রম কিছুটা স্বাভাবিক।
গর্ভবতী মায়েরা এবং শিশুদের স্বাস্থ্য সেবার জন্য পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে আসেন, কিন্তু প্রায়ই সেখানে দরজা বন্ধ বা কর্মীরা অনুপস্থিত থাকেন।
স্থানীয় বাসিন্দা রেহানার অভিযোগ, তার গর্ভবতী মেয়ে কয়েক দিন আগে এখানে এসেছিলেন, কিন্তু প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়া যায়নি। আবার, আব্দুল গাফফারের মতে, কার্যালয় মাঝে মাঝে খোলা থাকে, তবে সেবা পাওয়া যায় না।
রূপগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা মেডিকেল অফিসার শুভাগত সাহা জানান, লোকবল সংকটের কারণে সেবা প্রদান কঠিন হয়ে পড়েছে, তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রোমানুর নাহার আরও জানান, সামগ্রিকভাবে সেবাদান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করছি, তবে লোকবল সংকট ও সেবার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব রয়েছে।
কেকে/এএম