পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার সুতির বিলসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠে এখন কৃষকরা ব্যস্ত রসুনের জমি পরিচর্যায়। ঘন কুয়াশার মধ্যে তারা জমিতে কাজ করে এবং দুপুর-সকাল খাবারও জমিতে খাচ্ছেন।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, আটঘরিয়ার কয়রাবাড়ী, সুতিরবিল, একদন্ত, লক্ষীপুর দেবোত্তর, মাজপাড়া, চাঁদভা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা এখন বিনা চাষে রসুনের খেত পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত। আবহাওয়া ভালো থাকলে, এক বিঘা জমিতে প্রায় ৩০-৩৫ মন রসুন উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা।
বিলের পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা জমিতে নরম কাদামাটিতে বিনা চাষে রসুন রোপণের ধুম পড়ে যায়। কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায় রসুনের উপরই নির্ভর করে এ অঞ্চলের কৃষকের জীবন চলা।
যে বছর রসুনের বাজার ভালো থাকে তার পরবর্তী বছর আবাদ বেড়ে যায়। চলতি বছর রসুনের ভালো মূল্য পাওয়ায় কৃষকেরা নতুন ভাবে স্বপ্ন এতে বিগত বছরের চেয়ে আবাদ অনেকটাই বেশি করেছেন।
রসুনের বীজ, সার, কীটনাশক, কামলা খরচা ও পানি সেচ সব মিলে অন্য বছরের তুলনায় এবার ব্যয় বেশি হচ্ছে।
কৃষক রুস্তম ও রাজ্জাক প্রামানিক জানান, আমি তিন বিঘা জমিতে বিনা চাষে রসুন আবাদ করছি। এই পদ্ধতিতে রসুনের চাষ করলে জমিতে চাষ দেয়া ও কোপানো লাগে না। সার ও ওষুধ কম লাগে।
শুধু মাত্র ২টি সেচ দিলেই হয়। লাগানো রসুন ক্ষেতের চেয়ে অনেক বড় বড় গাছ ও রসুন বড় হয়। তার এ পদ্ধতি দেখে অন্যান্যে কৃষকরা তার সহযোগিতা চাইলে তিনি তাদের রসুন সরবরাহ করাসহ নানা ধরনের পরামর্শ দেন।
কয়রাবাড়ী এলাকার কৃষক খোকন, মিঠন সরদার জানান, সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে বিনা চাষে রসুন আবাদ শুরু করেছি। একবিঘা জমিতে বিনা চাষে রসুন আবাদ করতে তিন থেকে সাড়ে তিন মন কোয়া রসুন লাগে।
কৃষক আব্দুল কালাম জানান, এক বিঘা জমিতে রসুন চাষ করতে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। প্রান্তিক কৃষকদের এ টাকা সংগ্রহ করতে হিমশিম থেতে হয়। সরকারি তেমন কোন প্রণোদনা পাওয়া যায় না বা ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রেও জটিলতা অনেক। বাধ্য হয়েই এনজিও ঋণের উপর নির্ভরশীল হতে হয় কৃষকদের।
তারা আরও জানান, বিঘা প্রতি খরচ হয় ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। আর রসুন বিঘায় উৎপাদন হয় ৩৫ থেকে ৪০ মন। সব মিলিয়ে ভালো টাকা লাভ থাকে। গত বছর আমার ভালো ফলন হয়েছে। আশা করি এবার ভালো ফলন হবে বলে মনে করছেন এই তারা।
শ্রমিক রকি্ুল ইসলাম, কুবাদ আলী, রঞ্জু, কাওসার জানান, দিন মজুরি হিসাবে আমরা কাছ করি। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৫শ থেকে ৬শ টাকা মজুরি পাই।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল হক জানান, রসুন বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য অর্থকরী মসলা জাতীয় ফসল। এটি রান্নার স্বাদ, গন্ধ ও রুচি বৃদ্ধিতে অনেক বেশি ভূমিকা রাখে। পুষ্টিমূল্য ও ভেষজ গুণে ভরপুর এই রসুন। রসুনে রয়েছে আমিষ, প্রচুর ক্যালসিয়াম ও সামান্য ভিটামিন ‘সি’।
আটঘরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব আল মারুফ জানান, এবছর আটঘরিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মোট ১৪০৫ হেক্ট জমিতে বিনা চাষে রসুনের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩০০ হেক্টর। এ বছর ইতালি জাতের রসুন বেশি আবাদ হয়েছে। পাশাপাশি বারি-২,বারি-৩ জাতের রসুনও আবাদ করছে কৃষক।
তিনি আরও বলেন, রসুন ব্যবহার হয়ে থাকে নানা ধরণের রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও। এছাড়াও রসুন থেকে তৈরি ঔষুধ নানা রোগ যেমন-ফুসফুসের রোগ, আন্ত্রিকরোগ, হুপিংকাশি, কানব্যাথা প্রভৃতিতে ব্যবহৃত হয়।
কেকে/এএম