চলতি সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ, ১৯৭২ এর সংবিধান বাতিল, বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবৈধ ঘোষণাসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ‘সন্ত্রাসী ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও ফ্যাসিবাদের দোসর রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর পদত্যাগের দাবিতে’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজিত বিপ্লবী ছাত্র-জনতার গণজমায়েত থেকে এই পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেন সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
পাঁচ দফা দাবি গুলো হলো-
বিদ্যমান সংবিধান অনতিবিলম্বে বাতিল করে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন সংবিধান লিখতে হবে। ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে এই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে এই সপ্তাহের মধ্যে পদচ্যুত করতে হবে। এই সপ্তাহের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের আলোকে ‘প্রোকলেমেশন অব রিপাবলিক’ ঘোষণা করতে হবে এবং সেটির ভিত্তিতে ও বাংলাদেশের বিদ্যমান গণতন্ত্রকামী ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ চলবে। ২০১৪ সাল, ২০১৮ সাল এবং ২০২৪ সালে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে এবং এই তিন নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছে, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং তারা যেন কখনো বাংলাদেশে নির্বাচন করতে না পারে, সেজন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
দাবি ঘোষণার সময় হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগসহ ফ্যাসিবাদি সকল সংগঠন এবং মুজিববাদী চেতনার সাংস্কৃতিক সংগঠন ও গণমাধ্যমকে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে। ১৭ জুলাই যখন ছাত্রলীগ, যুবলীগ শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে, তখনই সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, জঙ্গি সংগঠন ও তার মা শেখ হাসিনার এই বাংলাদেশে স্থান হবে না।’
অনলাইনে সক্রিয় ছাত্রলীগ কর্মীদের উদ্দেশ্য করে হাসনাত বলেন, ‘তোমরা আমদের কি ভয় দেখাবে? আমরা পুলিশ লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমাদেরকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করেছি। তোমাদের ‘মাদার অব টেরর’ শেখ হাসিনা তোমাদের ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য টেনে-হিচড়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে।’
রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, আমরা এই শহিদ মিনার থেকে আমাদের বিপ্লব শুরু করেছিলাম। সেই বিপ্লবের ভয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছিলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা। আর এখন, আপনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে জনতার সঙ্গে প্রতারণা করছেন। কারণ, আপনি ৫ আগস্টে যা বলেছেন, তা এখন কার নির্দেশে ভুলে গিয়ে নতুন কথা বলছেন? আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই-খুনি হাসিনা যেভাবে পালিয়েছেন, চুপ্পুকেও পালাতে হবে। দেশের প্রশ্নে, দশের প্রশ্নে বিপ্লবীরা সব সময় মাঠে আছে।
গণজমায়েতে সারজিস আলম বলেন, আবারো যদি প্রয়োজন হয়, আমরা আমাদের চোখ দিতে প্রস্তুত, পা দিতে প্রস্তুত, হাত দিতে প্রস্তুত, এমনকি জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। ফ্যাসিস্ট দল ছাত্রলীগ যেভাবে আমাদের ভাইদের হত্যা করেছে, তাদের উত্থান সহ্য করা হবে না।
সমাবেশে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা- ‘আমাদের সংগ্রাম, চলছে চলবে; আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ; অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন; আওয়ামী লীগের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান; ছাত্রলীগের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান; স্বৈরাচারের দোসরেরা হুঁশিয়ার সাবধান; অবৈধ রাষ্ট্রপতি, মানিনা মানব না; আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করো, করতে হবে’ ইত্যাদি বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
এ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম, আবু বাকের মজুমদার, রিফাত রশীদসহ প্রমূখ।
গণজমায়েত শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে কর্মসূচি শেষ হয়।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সাথে আলোচনার জন্য আগামীকাল বুধবার সময় দিয়েছেন।
এবিষয়ে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ফেসবুক স্টাটাসে বলেন, ‘ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ আমাদের সাথে আলোচনার জন্য আগামীকাল সময় দিয়েছেন। আমরা প্রত্যাশা করি, ছাত্রজনতার পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেবে।’
কেকে/এজে