যশোরের কেশবপুরে সরিষা চাষ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ সময় বছর ১৬ হাজার ৫শ' বিঘা জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ভয়াবহ বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে কৃষক ১১ হাজার ৪৭৫ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করতে পেরেছেন।
কেশবপুরের ১১টি ইউনিয়নের বিস্তৃত মাঠজুড়ে বারি সরিষা চাষের উৎসবে মেতেছেন কৃষকরা। সরিষার ভালো ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকারিভাবে ৪ হাজার ১০০ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।
গত বছর এ উপজেলায় ১৬ হাজার ১২৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর সরিষার আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৪৭৫ বিঘা জমিতে। সে হিসেবে এ বছর সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৬ হাজার ৫০০ বিঘা জমি। কিন্ত চলতি বছর ভয়াবহ বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে গত বছরের তুলনায় এবছর ৫ হাজার ২৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ কম হয়েছে। কৃষকের মাঠে আগাম জাতের বারি সরিষা চাষে ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কেশবপুরের কৃষকরা বোরো আবাদের আগে একই জমিতে আগাম বারি-১৪, বারি-৯, বারি বীনা-৯, বারি-১৮, বারি-১৭ ও টরি-৭ জাতের সরিষা চাষ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।
আর সরিষার বাম্পার ফলন ঘরে তোলার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত বার্ষিক লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত করতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি অধিক ফলনশীল বারী-১৪ ও বারি-৯ জাতের এই সরিষা চাষ করে কৃষকরা বোরো আবাদের খরচ উঠিয়ে নেয়। এ বছর নতুন করে টরি-৭, বারি-৯, বারি বীনা-৯, বারি-১৭ ও বারি- ১৮ জাতের উচ্চ ফলনশীল সরিষা চাষ শুরু করেছে। এসব জাতের সরিষা ৭০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে কৃষকরা ঘরে তুলতে পারে। যার ফলে কৃষকরা সরিষা চাষের পরে খুব সহজে বোরো আবাদ করতে পারেন। যে কারণে উপজেলাব্যাপী কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন বেশি।
উপজেলার বরণঢালি গ্রামের কৃষক আবদুর রশিদ, আবদুর রহমান, মৃনাল দাস, জসিম উদ্দিন, গোলাম মোস্তফা, প্রতাপপুর গ্রামের আবদুল কুদ্দুস, কাকিলাখালী গ্রামের আফজাল হোসেন, দেউলি গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান, রেজাউল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, মজিদপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার বলেন, প্রতি বছর সরিষার চাষ করা হয়। সরিষা চাষে অনেক লাভোবান হন তারা। ইরি বোরো মৌসুমের আগেই সরিষা তুলে সেই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করে থাকেন কৃষকরা।
তবে চলতি বছরে সরিষা চাষে বাম্পার ফলন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা। সাতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন, ময়েজ উদ্দিন, ব্রহ্মকাটি গ্রামের তরিকুল ইসলাম, আবদুল মজিদ, বিশ্বনাথ, রামচন্দ্রপুর গ্রামের আবদুল সরদার, আজিজুর খাঁ তপন বসু বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছরে বৃষ্টির পানি কম থাকলেও সরিষা ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিঘা প্রতি জমিতে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৬ থেকে ৭ মণ সরিষা পাবে বলে তারা ধারণা করেছেন। বাজারে সরিষার দামও ভালো পাওয়া যাবে। তবে চলতি বছর এলাকায় বন্যা হওয়ায় কৃষকেরা বেশি আবাদ করতে পারেনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, চলতি বছরে ১৬ হাজার ৫শ' বিঘা জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্ত ভয়াবহ বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে লক্ষ্যমাত্রা কমে এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৪৭৫ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ অর্জিত হয়েছে। সরিষা গাছে ভালো ফুল ও ফল দেখা গেছে। বর্তমান আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত এলাকায় গিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে চলেছি।
কেকে/এআর