মনকে শান্তনা দিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ব্যাটারী চোরকে নতুন কৌশলে বিচার করতে দেখে হতবাক এলাকাবাসী।
গত ২৩ ডিসেম্বর সোমবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অজ্ঞাত নামা সিএনজিচালিত অটোরিকশার ব্যাটারী চোরকে বিচার করার ১ মিনিট ৭ সেকন্ডের একটি অবাক করা নতুন কৌশলের ভিডিও ভাইরাল হয়। সে ভিডিওতে দেখা যায় একটি সিএনজিতে মাইক লাগিয়ে মনকে শান্তনা দিতে চোরকে মনের দুঃখে গালিগালাজ করে মনকে হালকা করছে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক।
গালিগালাজ করা ওই সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকের নাম হৃদয়। সে ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী পুরানগাঁও গ্রামের মৃত আনার মিয়ার ছেলে। গত ২১ ডিসেম্বর শনিবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে বাড়িতে আসে সে। পরে অটোরিকশার ব্যাটারিটি খুলে মায়ের ঘরে রেখে আসে। এর কিছুক্ষণ পর তার মায়ের ঘর থেকে ব্যাটারিটি চুরি হয়ে যায়।
জানা যায়, হৃদয়ের ঘরের চালা নেই, জানালা নেই, বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। পলিথিন দিয়ে কোনো রকম জানালা ও ঘরের চালা আটকিয়ে সেখানেই স্ত্রী বাচ্চা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে।
এ বিষয়ে হৃদয় বলেন, আমি গরিব মানুষ অন্যের সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়ায় চালিয়ে দিন এনে দিন খাই। ব্যাটারি চুরি হওয়ায় দুইদিন ধরে তিন সন্তান, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। এর মধ্যে প্রতিদিন সাড়ে চারশো টাকা অটোরিকশার ভাড়া দিতে হয় মহাজনকে। এমতাবস্থায় ব্যাটারি চুরি হওয়ার পরদিন এলাকার মাদকসেবীসহ বিভিন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। হাতে পায়ে ধরেছি, যাতে আমার ব্যাটারিটি ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু কেউ আমার ব্যাটারিটি ফিরিয়ে দেয়নি। পরে রাগে ক্ষোভে মনকে শান্তনা দিতে মাইক ভাড়া করে চোরকে মনের দুঃখে গালিগালাজ করেছি। এর জন্য কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি ক্ষমা প্রার্থী।
হৃদয়ের মা অরুনা বেগম বলেন, হৃদয়ের বাপ মারা যাওয়ার পর থেকে সংসারে অভাব অনটন লেগেই আছে। এর মধ্যে কিছুদিন আগেও একবার তার একটি ব্যাটারি চুরি হয়েছে। অনেক কষ্টে ধারদেনা করে ব্যাটারি কিনতে হয়েছে। এরই মধ্যে গত শনিবার আবার ব্যাটারি চুরি হয়, আমার ছেলে অনেকটা পাগলই হয়ে যায়। দুইদিন ধরে ব্যাটারির জন্য গাড়ি চালানো বন্ধ। এমতাবস্থায়, অভাবের সংসার এখন কীভাবে চলবে, কীভাবে মহাজনের ভাড়া পরিশোধ করেবে? এই চিন্তায় ছেলে আমার অনকটা পাগল হয়ে গেছে।
মানিকদী চৌমুরি বাজারের মাইকের দোকানদার মো. আবেদ উল্লাহ বলেন, সকালে একটি লোক পাগলের মতো এসে মাইক ভাড়া চায়। প্রথমে আমি দিতে চাইনি, পরে অনেকের অনুরোধে ভাড়া দেই। তারপর দেখি মাইক দিয়ে সে চোরকে গালিগালাজ করছে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক মাসুদ মিয়া বলেন, হৃদয় আমার গাড়ি চালায়, দৈনিক সাড়ে চারশো টাকা ভাড়া দেয়। চুরির ঘটনাটি শুনেছি কিন্তু আমার পক্ষেতো তেমন কিছু করার নেই। আমি বড়জোর তার কয়েকদিনের ভাড়া মকুফ করতে পারি।
কেকে/এআর