তাবলিগ জামাতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ ও মসজিদের আশপাশের এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জুবায়েরপন্থীরা (শুরায়ে নেজাম)।
আজ মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে কাকরাইল মসজিদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তাবলিগ জামাতের জুবায়েরপন্থী আলেম ও উত্তরা জামিয়াতুল মানহালের প্রিন্সিপাল কেফায়েতুল্লাহ আজহারী।
সংবাদ সম্মেলনে কেফায়েতুল্লাহ আজহারী বলেন, কাকরাইল মারকাজ ও টঙ্গী ইজতেমার মাঠসহ তাবলিগের সব কার্যক্রম শুরায়ে নেজামীর অধীনে পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে। এসব দাবি বাস্তবায়নে আগামী বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাকরাইল ও তাঁর আশপাশের এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন করা হবে।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বরে সাদপন্থীরা একই কায়দায় একতরফা আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ৫ হাজারের মতো তাবলিগ জামাতের সাথী ও ছাত্র-শিক্ষকদের রক্তাক্ত করেন। এতেই প্রমাণিত হয় যে, সাদপন্থীরা তাবলিগি নয়, বরং তারা সন্ত্রাসী, চরমপন্থী বাহিনী। যারা গত ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। তাদের মূলহোতাসহ অনেকের নামে মামলা হয়েছে, কিন্তু আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার ও তাদের দোসররা যোগসাজশ করে সাদপন্থীদের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার একটি নীলনকশা করেছিল। তাদের এ নীলনকশা বাস্তবায়নে পার্শ্ববর্তী একটি দেশ ও ইসরায়েলের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে। এ সময় তিনি সাদপন্থীদের কার্যক্রম রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা, ১৭ ডিসেম্বর এবং ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বরের হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা এবং কাকরাইল মারকাজ ও টঙ্গী ইজতেমার মাঠসহ তাবলিগের সব কার্যক্রম শুরায়ে নেজামীর অধীনে পরিচালনা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
তিনি বলেন, যেহেতু তারা সন্ত্রাসী সেহেতু তাদের কোন কার্যক্রম তাবলীগের নামে কাকরাইল বা বিশ্ব ইজতেমার মাঠসহ কোথাও চলতে দেওয়া হবে না। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনতে হবে।
এ সময় মুফতি আমানুল হক, মাওলানা শাহরিয়ার, মাওলানা নাজমুল হাসান, মাওলানা মহিউদ্দিন মাসুম, মাওলানা জুবায়ের আহমদ, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়াসহ জুবায়েরপন্থী আলেম-ওলামারা, অনুসারীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের দুটি অংশ ‘জুবায়ের’ ও ‘সাদপন্থীদের’ মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর টঙ্গীর তুরাগ তীরে অবস্থিত বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের প্রায় অর্ধশত অনুসারী আহত হয়েছেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন তাবলীগ জামাতের সাদপন্থি মুসল্লিরা ও আলেম-ওলামারা। একই সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই পক্ষের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তবে জুবায়েরপন্থীরা বলছেন, তাবলীগের নামে কাকরাইল বা বিশ্ব ইজতেমার মাঠসহ কোথাও সাদপন্থীদের কোন কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। একইসঙ্গে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন তারা।
কেকে/এআর