জুলাই ছাত্র আন্দোলনে হামলার উস্কানিদাতা হিসেবে আটককৃত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপ-রেজিস্ট্রার ফারজানা ইসলাম তনিকে লক্ষ টাকার বিনিময়ে রক্ষার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা ও ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
জানা যায় গত ২২ ডিসেম্বর কর্মকর্তা ফারজানাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ডিবিতে সোপর্দ করেন। ডিবি তাকে সদর থানায় নিয়ে গেলে তাকে যেন থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং তাকে চাকরিতে বহাল রাখা হয় তার জন্য বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক ও ঐ কর্মকর্তার চাচাতো ভাই গাউস মোল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতা ও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে টাকার বিনিময়ে তাকে রক্ষা করার প্রস্তাব দেন। এসময় তিনি বশেমুরবিপ্রবি ছাত্র দল নেতা রাকিব ও দুর্জয় শুভোর সাথে কথা বলেন বলে জানা যায়।
এছাড়াও তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী তোহা ও বিশ্ববিদ্যালয় অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন এবং ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহনকারী পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওমর শরীফের সাথে যোগাযোগ করেন বলে জানা যায়।
এসময় তিনি সবাইকে তার বোনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা যেন কোনো পদক্ষেপ না নেয় তার জন্য তাদের সহযোগিতা চান। এর বিনিময়ে তিনি সবাইকে টাকা দিতেও রাজি আছেন বলে উল্লেখ করেন।
এছাড়াও কর্মকর্তা ফারজানার বোনও সবাইকে কল করে টাকার বিনিময়ে তার বোনকে রক্ষার জন্য প্রস্তাব দেন বলে জানা যায়।
টাকা দিতে চাওয়ার বিষয় সম্বলিত একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে ছাত্র অধিকার পরিষদের বশেমুরবিপ্রবি শাখার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিনকে বলতে শুনা যায় গাউস মোল্লা আমাকে বলেন, 'আমার বোনকে তোমরা রক্ষা করো। প্রয়োজনে আমি যত টাকা চাও দিব।'এসময় আমি বলি ক্যাম্পাসেতো আমি একা নই। এখানে ছয়টা রাজনৈতিক সংগঠন আছে। তখন গাউস মোল্লা বলে তাহলে ছয়টা সংগঠনকে আমি ছয় লক্ষ টাকা দিব, তোমরা কাজ করো।
অন্য আরেকটি অডিও ক্লিপে গাউস মোল্লা টাকার বিনিময়ের বিষয়ে বলতে দেখা যায়, "আমি অধিকারের সাধারণ সম্পাদক জসিমের কাছে আমার বোনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে তিনি আমাকে বলেন এই জন্য টাকা লাগবে। আমি তখন বলি কত টাকা লাগবে। উত্তরে সে আমাকে বলেন ক্যাম্পাসেতো ৬ টা বিভিন্ন দলের সংগঠন রয়েছে তাই ৬ লক্ষ টাকা লাগবে। তখন আমি বলি ৬ লক্ষ পারবো না ৫ লক্ষ দিতে পারবো। তখন তিনি আমার কথায় রাজি হন এবং কথা দেন তিনি আমার বোনের চাকরি বহাল এবং থানা থেকে ছড়িয়ে দিবেন।"
অডিও ক্লিপ ও টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন বলেন, "আমি কোনো টাকা চাইনি। তিনি আমাকে রিকুয়েষ্ট করেছিলেন তার বোনকে রক্ষার জন্য। তখন আমি তাকে বলি এখানে আমি একা না, সাথে বিভিন্ন সংগঠন আছে। আর এখন আমার একার হাতে নেই বিষয়টি। তিনি তখন আমার কাছে কয়টি সংগঠন আছে তা জানতে চাইলে আমি ছয়টি সংগঠনের কথা বলি। এরপর তিনি সব সংগঠনকে টাকা দিতে চান। আমি তার কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়নি।"
এই বিষয়ে ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহনকারী পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওমর শরীফ বলেন, "আমার রুমে এসে গাউস মোল্লা তার বোনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য রিকুয়েষ্ট করে। একই সাথে ফারজানার বোনও আমাকে কল করে। আমি তাদেরকে বলে দি এটা আমাদের হাতে নেই এবং এখন আমাদের কিছু করার নেই।"
টাকা দিয়ে ছাত্র নেতাদের মাধ্যমে বোনকে রক্ষার বিষয়ে গাউস মোল্লা বলেন, "আমি সবার কাছে যেয়ে অনুরোধ করি আমার বোনকে যেন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। সবাইকে বলি তার ছোট বাচ্চা এবং অটিস্টিকস সন্তান রয়েছে। আমি কাউকে টাকার অফর করিনি। আমি সবাই যাস্ট অনুরোধ করার জন্য গিয়েছিলাম।"
এই বিষয় পরে বিস্তারিত দেখা করে জানাবেন বলে ফোন কেটে দেন।
ফারজানা ইসলামের বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলার এসপি বলেন, "আজ আমরা তাকে কোর্টে চালান করে দি। কোর্ট তাকে কয়েকটি শর্ত দিয়ে তার সন্তান এবং মহিলা বিধায় মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে তাকে জামিন দেন।"
জমিনের বিষয়ে জানা যায় তাকে তিনটি শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন। শর্তগুলো হলোঃ-
১.চাকরিতে তিনি যোগদান করতে পারবেন না।
২.আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারবেন না।
৩.বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর যেকোনো ধরনের হুমকি দেয়া ও হমলা বা ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করতে পারবেন না।
কেকে/এআর