স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রলালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন,‘বিগত ফ্যাসিবাদের সময় উত্তরবঙ্গের প্রতি যে বৈষম্য হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই বৈষম্য ঘোঁচাতে কাজ করবে। সারাদেশে অন্যান্য জায়গায় যেভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম হয়েছে ঠিক একই ভাবে যাতে রংপুর, রাজশাহী বিভাগ তথা উত্তরবঙ্গেও সেভাবে যাতে উন্নয়ন হয় সেটি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে’।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন,‘শিল্পের বিকাশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবাহ সম্ভব নয়। সুতরাং উত্তরবঙ্গে যেন শিল্পের বিকাশ করা সম্ভব হয়। উত্তরবঙ্গের যে স্থলবন্দর আছে সেগুলোকে আরও শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অবশ্যই আলোচনা করব’।
উত্তরবঙ্গ বাংলাদেশের অত্যন্ত উর্বর উল্লেখ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন,‘কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে অগ্রগামী একটি অঞ্চল। আমি বিভিন্ন উপজেলার যে পরিসংখ্যানগুলো দেখছিলাম তাতে এই অঞ্চলের অধিকাংশ জায়গাতে প্রায় উৎপাদনের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ উদ্বৃত্ত থাকে। যেটা দিয়ে বাংলাদেশের যে অঞ্চলে ঘাটতি রয়েছে সেখানকার মানুষ কৃষি পণ্য খাওয়ার জন্য পেয়ে থাকে। সেই জায়গা থেকে কৃষিভিত্তিক শিল্প বিস্তারের কাজের অনেক সুযোগ আছে। কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে, বিভিন্ন সুগার মিলগুলো চালু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টেক্সটাইল মিলগুলো চালুর বিষয়ে আমি শিল্প উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলবো’।
তিস্তার পানির সমস্যার কথায় তিনি বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে পানির যে অভাব এবং বন্যার মৌসুমে পানিতে তলিয়ে যাওয়া এটা উত্তরবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যা। তিস্তার পানি সমস্যা কিভাবে নিরসন করা যায়, একটা দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান কিভাবে করা যায়। তার জন্য গণশুনানির আয়োজন করা হবে। আমরা উত্তরবঙ্গের মানুষের কথা শুনবো। তিস্তা নিয়ে আপনাদের সমস্যা গুলো শুনে তার প্রেক্ষিতে বৃহৎ বিষয়ে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এবং আমি আশাবাদী এর মাধ্যমে আপনাদের দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধান হবে’।
এই সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে পানিসম্পদ উপদেষ্টাসহ তিনি আগামী বছরের শুরুর দিকে উত্তরবঙ্গ সফরের কথা জানান।
উত্তরবঙ্গের বগুড়া স্টেডিয়ামে আগামী বছর থেকে বিপিএল আয়োজনে সংযুক্ত করা হবে বলে উল্লেখ করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ওই উপদেষ্টা বলেন,‘আপনারা জানেন এবারের বিপিএলের আয়োজন হচ্ছে ঢাকার মিরপুরে এবং চট্টগ্রামে। উত্তরবঙ্গের বগুড়ায় একটা আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম ছিল। কিন্তু সংস্কার কাজসহ বিভিন্ন অবহেলার কারণে এটি এখন সেভাবে ব্যবহারপোযোগী নয়। সেটাকে আমরা অতি দ্রুত সংস্কার করবো এবং যে তিনটি স্টেডিয়ামে এখন আন্তর্জাতিক খেলা হয় বিপিএলের ভেনু হয় তার সাথে উত্তরবঙ্গের একটি স্টেডিয়াম হিসেবে বগুড়া স্টেডিয়ামকে আগামী বছর থেকে সংযুক্ত করা হবে’।
উন্নয়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক আর কোন বৈষম্য থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের যে চলমান প্রকল্প গুলো আছে, লক্ষ্য করেছি সেই প্রকল্পগুলোতে কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ অতিমাত্রায় বেশি এবং কিছু অঞ্চলে এলাকাভিত্তিক বৈষম্যের শিকার হয়েছে। আমরা সেগুলো পুনরবন্টন করছি। উন্নয়ন যেন সুষম ভাবে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে যায় বিশেষভাবে যে অঞ্চলগুলো বৈষম্যের শিকার হয়েছে, সেখানে যেন বিশেষ পরিচর্যার উন্নয়ন কার্যক্রম করা যায়, এটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আপনারা খুব দ্রুতই এর দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখতে পারবেন’।
সরকারি সেবায় ঘুষ দর্নীতি বন্ধে কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন,‘এখানে যেহেতু জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীগণ রয়েছেন, তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে। নাগরিক সেবাকে গুরুত্ব দিয়ে জনবান্ধব পাবলিক সার্ভেন্ট হিসাবে আপনারা কাজ করবেন। আমরা এই নতুন বাংলাদেশের গণজোয়ার থেকে ঘুষ আদায় কিংবা দুর্নীতি এই ধরনের কোন অভিযোগ আর শুনতে চাই না। যদি কোন কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে এরকম কোন অভিযোগ আসে। তাহলে সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে’।
এসময় নাগরিকদের থেকে সরাসরি অথবা চিঠির মাধ্যমে অভিযোগ করার আহ্বান জানান তিনি।
সংস্কারের কথায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম এজেন্ডা হচ্ছে সংস্কার। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদের সময়ে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। আমরা মনে করি সংস্কার কার্যক্রমের মাধ্যমে যদি তা পুনরগঠন না করা হয়। তাহলে আমরা এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা থেকে কখনো বের হতে পারবো না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে কারণে আমাদের এতো ভাই ছাত্র-জনতা শহীদ হলো, আহত অবস্থায় এখনো অনেকে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। সেই অন্যতম সংস্কারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আপনাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, আপনারা আপনাদের সহযোগিতা, সমর্থন এবং সংস্কার কাজে অংশগ্রহণ করবেন। আমরা আগামীর বাংলাদেশকে ঠিক আপনারা যেভাবে চান। জনগণ যেমন বাংলাদেশ চায়, সেরকম একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।
নতুন বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়ের কথায় তিনি বলেন,‘আবার যখন দেখা হবে, আশা করি দৃশ্যমান কিছু কাজ আপনাদের জন্য করতে পারব। যাতে করে আপনাদের প্রতি হওয়া যে বৈষম্য, দুঃখ আছে তা কিছুটা হলেও লাঘব হয়। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন এবং সহযোগিতা করবেন। নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে লড়াই, সে লড়াইয়ে যেন আমরা সফল হতে পারি’।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জায়িদ ইমরুল মোজাক্কিনের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা দেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. মোস্তফা মঞ্জুর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ লিয়ন, সহ-সমন্বয়ক রেদোয়ান আহমেদ, জলঢাকা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ময়নুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের সূরা সদস্য ওবায়দুল্লা সালাফী প্রমুখ।
সন্ধ্যায় তিনি সার্কিট হাইজে আন্দোলনে দুই শহিদ পরিবারে মাঝে সহযোগিতার চেক বিতরণ করেন।
কেকে/এমএস